সাত ডিআইজির এক ঝটিতেই পদোন্নতি, অতিরিক্ত আইজিপি পদে নতুন মুখ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সোমবার বিকেলে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ পুলিশের সাতজন উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) পদে পদোন্নতি দিয়েছে। সুপার নিউমারারি—অর্থাৎ বাড়তি—সাতটি পদ সৃষ্টি করে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়; পদে সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি, অবসর বা অপসারণ হলে পদগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। নতুন অতিরিক্ত আইজিপিরা স্বপদে থেকেই আগের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করবেন এবং পদগুলোর মেয়াদ এক বছর।
পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন পুলিশ অধিদপ্তরের কাজী মো. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের মো. আহসান হাবীব (পলাশ), ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার, এপিবিএনের মো. আলী হোসেন ফকির ও মো. মোস্তফা কামাল, পুলিশের বিশেষ শাখার জি এম আজিজুর রহমান এবং হাইওয়ে পুলিশের মো. রেজাউল করিম। আদেশটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি হয়েছে এবং তাৎক্ষণিক কার্যকর।
মূল তথ্য
• পুলিশের সর্বোচ্চ পদমর্যাদা মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ঠিক পরেই অতিরিক্ত আইজিপি পদ। এবার একদিনে সাতজন ডিআইজি একই সঙ্গে সে আসনে পৌঁছালেন।
• জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়তি সাতটি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে এই পদোন্নতি হয়। খরচ চলতি বছরের বাজেট থেকেই মেটানো হবে।
• পদোন্নতিপ্রাপ্ত কেউ অবসর, বদলি বা অন্য কারণে পদ খালি করলেই সংশ্লিষ্ট সুপার নিউমারারি পদটি বিলুপ্ত হবে। মেয়াদ শুরু থেকে হিসাব করে সর্বোচ্চ এক বছর থাকবে।
প্রেক্ষাপট
দেশে বর্তমানে পুলিশ সদস্য প্রায় আড়াই লাখ। এত বড় বাহিনী পরিচালনায় শীর্ষ পর্যায়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তার প্রয়োজন বাড়ছে বলে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে উঠে এসেছে। ২০২2 সালে শেষ এককালীন পদোন্নতির পর এবারই প্রথম একসঙ্গে সাতজনকে অতিরিক্ত আইজিপি বানানো হলো। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে ১৮টি অতিরিক্ত আইজিপির অনুমোদিত পদ ছিল। নতুন সাত পদ যুক্ত হওয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়াল ২৫, যদিও পদগুলো অস্থায়ী।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক নাসির উদ্দিন রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, "জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে সমন্বয় জোরদার করতে শীর্ষপদে দক্ষ জনবল জরুরি। তবে সুপার নিউমারারি পদ্ধতিতে পদ বাড়ানো একইসঙ্গে ব্যয় ও কাঠামোগত চাপও তৈরি করে।" ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, "যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রশংসনীয়, তবে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে পুরো প্রক্রিয়া ও মানদণ্ড প্রকাশ করা উচিত।"
প্রতিক্রিয়া
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মে. মনজুর রহমান বলেন, "নতুন অতিরিক্ত আইজিপিরা নিজ নিজ ইউনিটেই কাজ চালিয়ে যাবেন। এতে চলমান অপারেশনে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, একই সঙ্গে নীতি নির্ধারণী কাজে অভিজ্ঞতা যোগ হবে।" চট্টগ্রাম রেঞ্জের নবনিযুক্ত অতিরিক্ত আইজিপি মো. আহসান হাবীব টেলিফোনে আর্থসুচককে বলেন, "এই স্বীকৃতি দায়িত্ব বাড়িয়ে দিল। গ্রাসরুটে অপরাধ দমন ও জনআস্থা বৃদ্ধিই অগ্রাধিকার।"
এর গুরুত্ব কী
১. পদোন্নতির ফলে প্রায় এক ডজন জ্যেষ্ঠ ডিআইজির পদোন্নতির অপেক্ষাও দীর্ঘ হলো; এতে ভেতরের প্রতিযোগিতা তীব্র হতে পারে।
২. নির্বাচনপূর্ব সময়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশনা ও ক্ষিপ্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত আইজিপির সংখ্যা বাড়ানোকে সরকার 'প্রশাসনিক প্রয়োজন' বললেও সমালোচকেরা এটিকে রাজনৈতিক হিসাবের অংশ মনে করছেন।
৩. কেবল এক বছরের জন্য অস্থায়ী পদ তৈরির নজির প্রসঙ্গে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি জনবল পরিকল্পনা না থাকলে এ ধরনের সমাধান টেকসই হয় না।
পরবর্তী পদক্ষেপ
• জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখন নতুন অতিরিক্ত আইজিপিদের জন্য পিআরএল, গাড়ি ও লজিস্টিক বরাদ্দের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে।
• অবশিষ্ট শূন্য ডিআইজি পদে শিগগিরই এসএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
• নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি রেঞ্জ ও বিশেষ শাখায় কমান্ড কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রক্রিয়া শুরু করবে হেডকোয়ার্টার্স।
শেষ কথা
একদিনে সাতজন ডিআইজি-র পদোন্নতি পুলিশের ইতিহাসেই বিরল ঘটনা। জবাবদিহি, দক্ষতা ও জনস্বার্থ—এই তিন পরীক্ষায় নতুন অতিরিক্ত আইজিপিদের উত্তীর্ণ হতে হবে এখন। রাজপথে ট্রাফিক শৃঙ্খলা থেকে সন্ত্রাস দমন—সব জায়গায়ই তাঁদের নেতৃত্বের ছাপ পড়বে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।

