যুক্তরাজ্যের ‘নির্বাসন আগে, আপিল পরে’ নীতি সম্প্রসারণ: বাংলাদেশিদের জন্য কী ঘটতে পারে

যুক্তরাজ্যের ‘নির্বাসন আগে, আপিল পরে’ নীতি সম্প্রসারণ: বাংলাদেশিদের জন্য কী ঘটতে পারে

লন্ডন, ১০ আগস্ট—বিতর্কিত ‘ডিপোর্ট ফার্স্ট, আপিল লেটার’ পরিকল্পনার পরিধি বাড়িয়ে আরও ১৫টি দেশকে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার ঘোষণা করেছেন, তালিকাভুক্ত দেশগুলোর দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশি নাগরিকদের মানবতাবাদী আপিল শেষ হওয়ার আগেই স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। নতুন তালিকায় ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি কমনওয়েলথ রাষ্ট্র থাকলেও বাংলাদেশ নেই; তবে লন্ডন ও ঢাকার মধ্যে ২০২৩ সালের প্রত্যাবর্তন চুক্তির কারণে বাংলাদেশের অভিবাসীসমাজ ইতিমধ্যে চাপ অনুভব করছে। সরকার বলছে, দ্রুত বিচার ও কারাগারের জায়গা সাশ্রয়ই উদ্যোগের লক্ষ্য, কিন্তু অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন—আসল শিকার হবেন বৈধ আশ্রয়প্রার্থী ও ছোট নৌকায় আসা দুর্বল অভিবাসীরা।

মূল তথ্য

• আগের ৮ টি দেশের তালিকা বেড়ে হয় ২৩।

• নতুন তালিকায় ভারত, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কenya, মালয়েশিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া প্রভৃতি।

• মানবতাবাদী (আর্টিকেল ৩) কিংবা পারিবারিক জীবনের (আর্টিকেল ৮) আপিল চলাকালীনই অভিযুক্তকে ফেরত পাঠানো যাবে।

• দেশে ফেরার পর পরবর্তী আপিল হবে ভিডিও লিংক দিয়ে।

• ২৫,০০০-এর বেশি অভিবাসী এ বছর ছোট নৌকায় পৌঁছেছে—এটাই নীতির প্রধান রাজনৈতিক সংস্কার।

প্রেক্ষাপট

২০১৩ সালে কনজারভেটিভ সরকার ‘ডিপোর্ট ফার্স্ট, আপিল লেটার’ নীতি চালু করলেও ২০১৭-তে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এটিকে বেআইনি বলে রায় দেয়। পরে আইনের মেরামত ঘটিয়ে ভিডিও-আপিলের শর্তে আংশিক পুনর্বহাল করা হয়। লেবার সরকারে যোগ দিয়ে ইয়েভেট কুপার এখন সেই নীতিকে আরও কঠোর করেছেন—কারাগারের ভিড়, সীমান্তে ছোট নৌকা এবং রাজনৈতিক চাপকে কারণ দেখিয়ে।

প্রতিক্রিয়া

ব্রিটিশ আইনজীবী সংগঠন ‘ইমিগ্রেশন ল’ প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বলেছে, “ফিরিয়ে দেওয়ার পর সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা, সনদ অনুবাদ করানো বা আইনজীবী নিয়োগ করা বাস্তবে অসম্ভব হয়ে পড়বে।” বাংলাদেশের বারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন মনে করেন, ২০২৩ সালের ইউকে-বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন সমঝোতা স্মারক এখনই হাইকমিশনকে ‘ইমারজেন্সি ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ জারি করতে তাড়াহুড়োয় বাধ্য করছে, যা “অসুস্থিতি ছাড়া আর কিছুই নয়”। অপরদিকে যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তর দাবি করেছে, “অপরাধীরা আর লুপহোল ব্যবহার করতে পারবে না—জননিরাপত্তাই আমাদের অগ্রাধিকার।”

বিশ্লেষণ

এখনই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই, তবু উদ্বেগের কারণ তিনটি:

১) ২০২৩-এর সমঝোতার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশি ‘ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থী’ এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের দ্রুত পাঠাচ্ছে; নতুন নীতি সেই প্রক্রিয়াকে বৈধতা ও গতি দেবে।

২) ছোট নৌকার ‘রুট’ ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ধীরে হলেও বাড়ছে; তালিকা সম্প্রসারণের পর ব্রিটিশ রাজনীতিকদের কাছে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির চাপ বাড়তে পারে।

৩) যুক্তরাজ্যে থাকা প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশির অনেকে পরিবারভিত্তিক ভিসা ও আশ্রয় আইনের ওপর নির্ভরশীল; আপিলের সময় দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি এ সম্প্রদায়ের মানসিক ও আর্থিক নিরাপত্তাকে নাড়া দেবে।

এরপর কী

• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন ‘পাইলট’ পর্যায়ে কয়েক শ’ মামলায় নতুন নিয়ম প্রয়োগ করবে; সফল হলে পূর্ণাঙ্গ তালিকা কার্যকর হবে ২০২6 সাল থেকে।

• বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে বিশেষ হটলাইন চালু করার কথা ভাবছে, যাতে ভিসা বা পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায় পড়া প্রবাসীরা দ্রুত পরামর্শ পান।

• মানবাধিকার সংগঠন ‘লিবার্টি’ ইতিমধ্যে নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ প্রস্তুত করছে—আবারও সুপ্রিম কোর্টের দ্বার থোকাতে পারে।

• অভিবাসী সংগঠনগুলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের আপাতত ভিসার মেয়াদ ও অপরাধসংক্রান্ত কাগজপত্র হালনাগাদ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

More From Author

আদালত শক্তি খর্ব করলে ১৯২৯-এর মন্দা ফিরবে: শুল্ক যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের সতর্ক বার্তা

বিজিআইসি পেল ‘AAA’ ক্রেডিট রেটিং, বিনিয়োগকারীরা দেখছেন আস্থার নতুন বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *