মাত্র পাঁচ বলেই ম্যাচ শেষ: আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে যুব বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কানাডার বিস্ময়কর জয়
রোববার, ১০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার পরম বীর স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ২০২৫-এর আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে কানাডা অনূর্ধ্ব-১৯ দল আর্জেন্টিনাকে মাত্র ২৩ রানে অলআউট করে। জবাবে অধিনায়ক যুবরাজ সামরা প্রথম পাঁচ বলেই দুই চার ও দুই ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন; হাতে রয়ে যায় ১১৫ বল। ফলে ৫ বল খেলেই ম্যাচ জিতে ক্রিকেটদুনিয়ায় আলোড়ন তোলে কানাডা। বোলিংয়ে জগমানদীপ পালের ৬ উইকেট আর্জেন্টিনার ইনিংস ধসিয়ে দেয়। জয়টি যুব ওয়ানডে মর্যাদা না পাওয়ায় রেকর্ডবইয়ে ঢোকেনি, তবে পয়েন্ট টেবিলে দুই ম্যাচে এক জয়ে কানাডা দ্বিতীয় স্থানে। দুই জয়ে তালিকার শীর্ষে আছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র, আর টানা দুই হারে তলানিতে আর্জেন্টিনা।
ঘটনাপ্রবাহ
টস জিতে ব্যাট করতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিপর্যয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৯। ইনিংসটি থেমে যায় ১৯.৪ ওভারে ২৩ রানে; সাত ব্যাটারই ফেরেন গোল্ডেন ডাক নিয়ে। ক্যাচ-রাহিত, বোল্ড-এলবিডব্লিউ মিলিয়ে বোলারদের দাপট স্পষ্ট ছিল। কানাডার ডানহাতি পেসার জগমানদীপ পাল পাঁচ ওভারে তিন মেইডেনসহ মাত্র সাত রান দিয়ে তুলে নেন ৬ উইকেট। ২৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যুবরাজ সামরা প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা, চতুর্থ বলে চার মারেন। পঞ্চম বল ডট হওয়ার পরই স্কোর সমতায় পৌঁছে যায়; অপর প্রান্তে থাকা ধর্ম প্যাটেল অপরাজিত থাকেন ১* রানে। ৫ বল, ০ উইকেট, ১১৫ বল হাতে—ক্রিকেটের নবীনতম সংস্করণেও বিরল এক জয়।
পটভূমি
এই বাছাইপর্বের শীর্ষ দল ২০২৫ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বারমুডা ও আর্জেন্টিনা—চার দলের রাউন্ড-রবিন লিগ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটিই বিশ্বকাপে যাবে। কানাডা প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছিল; আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বড় জয়ে তাদের নেট রানরেট দ্রুতই উন্নত হয়েছে। আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৯ দলটি মূলত শৌখিন ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া; দক্ষিণ আমেরিকায় ক্রিকেট এখনো গোঁড়া পর্যায়ে। অন্যদিকে কানাডা নিয়মিত আইসিসি সহযোগী সদস্যের তালিকায় ৫০-ওভারের ক্রিকেট খেলে, ঘরোয়া কাঠামোও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
২৩ – আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সম্মিলিত স্কোর, যার ৭ রানই অতিরিক্ত।
৬/৭ – জগমানদীপ পালের বোলিং ফিগার, মাত্র পাঁচ ওভারে।
৫ – কানাডার জয়ের জন্য লাগা বলের সংখ্যা; হাতে ছিল ১১৫ বল।
৩২ – পাঁচ বলে যুবরাজ সামরার ঝড়ো অপরাজিত রান।
২২ – যুব ওয়ানডেতে সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংস (স্কটল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০০৪); আর্জেন্টিনার ২৩ রান মর্যাদা পেলে দ্বিতীয় হতো।
৩.৫ ওভার – এখনও পর্যন্ত যুব ওয়ানডেতে দ্রুততম রান তাড়া (অস্ট্রেলিয়া, ২০০৪); কানাডার রেকর্ডটি মর্যাদাহীন হওয়ায় তালিকায় উঠল না।
এর গুরুত্ব কী
যুব পর্যায়ে এমন একতরফা ফল আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও এটি দুই মহাদেশে ক্রিকেটের সক্ষমতার পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। আইসিসি সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিয়েই ২০২৫ যুব বিশ্বকাপের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আর্জেন্টিনার মতো উদীয়মান দলগুলো কতটা পিছিয়ে তা এই ম্যাচে ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে চিন্নি কাগজে না উঠলেও কানাডার ৫ বলের জয় ভবিষ্যতের ট্যালেন্ট হান্টে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। তাছাড়া নেট রানরেটের দিক থেকেও এটি তাদের যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে শীর্ষে ওঠার সুযোগ খুলে দিয়েছে।
এরপর কী
বাছাই টুর্নামেন্টে কানাডার সামনে এখন বারমুডা ও স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যুক্তরাষ্ট্র আপাতত দুই জয়ে শীর্ষে থাকলেও নেট রানরেট কানাডার রেকর্ড জয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শেষ রাউন্ডে দুই দলের সরাসরি লড়াইটাই সম্ভাব্য ফাইনাল হয়ে উঠছে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার লক্ষ্য হবে বাকি ম্যাচগুলোতে লজ্জা কমানো এবং প্রতিযোগিতামূলক স্কোর দাঁড় করানো।

