ভোটের আগে সংস্কার চান অর্ধেকের বেশি, সিদ্ধান্তহীন ৪৮% ভোটার—বিআইজিডি জরিপ
ঢাকায় প্রকাশিত ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’-এর যৌথ টেলিফোন জরিপে দেখা গেছে, ১–২০ জুলাই ২০২5 সময়ে ৬৪ জেলার ৫,৪৮৯ ভোটারের মধ্যে ৫১ শতাংশই পুরো সংস্কার শেষ না হলে জাতীয় নির্বাচন চান না। একই সঙ্গে ৪৮.৫ শতাংশ ভোটার এখনো ঠিক করেননি কাকে ভোট দেবেন। ভোটের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মাত্র ১২% বিএনপি, ১০.৪% জামায়াতে ইসলামী, ৭.৩% আওয়ামী লীগ ও ২.৮% জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি)। জরিপের ফল সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও জাতীয় আর্কাইভ মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়।
সংখ্যায় তথ্য
• ভোটদানের উদ্দীপনা: বিএনপি ১২%, জামায়াত ১০.৪%, আওয়ামী লীগ ৭.৩%, এনসিপি ২.৮%, জাতীয় পার্টি ০.৩%, অন্যান্য ১.৮%।
• সিদ্ধান্তহীন: ৪৮.৫%; মত জানাতে অস্বীকৃতি ১৪.৪%; ভোট না দেওয়ার ইচ্ছা ১.৭%।
• নির্বাচন সুষ্ঠু হবে মনে করেন ৭০%; হবে না বলেন ১৫%।
• নির্বাচনের আগে ‘সম্পূর্ণ সংস্কার’ চান ৫১%; ‘কিছু জরুরি সংস্কার’ চান ১৭%; নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন চান ৩২%।
• দশ মাসে দলীয় জনপ্রিয়তার পরিবর্তন: বিএনপি মাইনাস ৪.৩ পয়েন্ট, জামায়াত মাইনাস ০.৯, আওয়ামী লীগ মাইনাস ১.৬, এনসিপি প্লাস ০.৮।
প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের অক্টোবরে করা একই প্রশ্নের সর্বশেষ উত্তরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, তখন বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি উচ্চ আশাবাদ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা অবনতি, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে ওই সমর্থন কমেছে। জরিপটি এমন সময় প্রকাশিত হলো, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০–দলীয় জোটের আন্দোলন স্থবির এবং সরকার বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই পরবর্তী নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থনীতিও ধীরগতির; কিন্তু জরিপ অনুসারে জনগণের দৃষ্টি এবার দুর্নীতি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকেই বেশি।
বিশ্লেষণ
বিআইজিডির ফেলো সৈয়দা সেলিনা আজিজের ব্যাখ্যা, ‘বহুমাত্রিক’ সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে রাজনীতি; নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় হলেও আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ভোটারদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ২৭ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা ৯% অথচ জামায়াতের ১২%—যা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন ঢেউ ইঙ্গিত করে। গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত সমান (১০%) সমর্থন পেলেও আওয়ামী লীগ ৫%—শিক্ষিত শ্রেণিতে সরকারি দলের আস্থাহীনতা স্পষ্ট। অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষিতদের মধ্যে বিএনপির সমর্থন তুলনামূলক বেশি (১৪%)। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার দরুন ‘অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি’ ভোটারদের মানসিকতায় কাজ করছে; তবে আওয়ামী লীগ নির্দিষ্ট প্রার্থী বা জোট কৌশলের মাধ্যমে এই ব্যবধান কমাতে পারে।
এরপর কী
৪৮% সিদ্ধান্তহীন ভোটার এবং ১৪% যাঁরা মত জানাতে নারাজ—দুটিই রাজনৈতিক দলের জন্য ‘স্বর্ণখনি’। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বর ২০২৫–এর মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি নিলেও জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক–চতুর্থাংশ ২০২৬ সালের পর ভোট মেনে নিতেও রাজি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে যে দল নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও আইনের শাসন প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য রোডম্যাপ দিতে পারবে, সেই দলই অনিশ্চিত ভোটব্যাংকের বড় অংশ টেনে নিতে পারবে।

