বিশ্বের তেল বাজারে দখল কার হাতে, কতটা তুলে কতটা খরচ করছে কে

বিশ্বের তেল বাজারে দখল কার হাতে, কতটা তুলে কতটা খরচ করছে কে

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (EIA) সাম্প্রতিক উপাত্ত বলছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ব্যারেল উত্তোলন করে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদক। একই সঙ্গে দেশটিই দিনে প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল খরচ করে সবচেয়ে বড় ভোক্তা। উৎপাদনের পরের পাঁচ স্থানে আছে সৌদি আরব, রাশিয়া, কানাডা, চীন ও ইরাক। ভোগের দিক থেকে চীনের পরে রয়েছে ভারত, জাপান ও সৌদি আরব। এই সংখ্যাগুলোই নির্ধারণ করে বৈশ্বিক মূল্য, ভূ-রাজনীতি ও জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা—যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

• উৎপাদন: IEA-র জুন ২০২4 হিসাব অনুযায়ী শীর্ষ পাঁচ উৎপাদক—যুক্তরাষ্ট্র 13.0 মি. ব্যারেল/দিন, সৌদি আরব 12.0, রাশিয়া 10.8, কানাডা 5.6, চীন 4.2।

• ভোগ: EIA-র তথ্য—যুক্তরাষ্ট্র 20.1 মি. ব্যারেল/দিন, চীন 15.7, ভারত 5.4, জাপান 3.5, সৌদি আরব 3.3।

• মজুত: ওপিক ডেটাবুক অনুযায়ী ৩০০-বিলিয়ন ব্যারেলের বেশি প্রমাণিত মজুত নিয়ে শীর্ষে ভেনেজুয়েলা, এরপর সৌদি আরব (267-বিলিয়ন), ইরান (208-বিলিয়ন)।

• দাম: ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ২০২১-এর মাঝামাঝি ৭০ ডলারের আশপাশে থাকা ব্রেন্ট ২০২২-এর মার্চে ১৩৯ ডলার ছুঁয়েছিল; বর্তমানে ঘোরাফেরা করছে ৮৫–৯০ ডলারে।

প্রেক্ষাপট

বড় মজুত মানেই বড় উৎপাদন নয়—তার বড় উদাহরণ ভেনেজুয়েলা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, অবকাঠামো সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ মজুত থাকা দেশটিতে দৈনিক উৎপাদন নেমে এসেছে ৮-৯ লাখ ব্যারেলে। বিপরীতে সৌদি আরব বা রাশিয়ার তুলনামূলক কম মজুত থাকলেও প্রযুক্তি ও পুঁজিনির্ভর অবকাঠামোয় তারা বিশ্ব বাজারের ‘সুইং প্রডিউসার’ হয়ে উঠেছে। ওপেক-প্লাসের কোটা নির্ধারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শেল তেল বিপ্লব এবং ইরান-রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়মিতভাবেই সরবরাহ চিত্র বদলে দিচ্ছে।

বিশ্লেষণ

তেলের দামে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে তিনটি বড় কারণ দেখছেন বিশ্লেষকেরা। প্রথমত, ইউক্রেন যুদ্ধের পরে রুশ তেল পশ্চিমা বাজার থেকে সরে গিয়ে মূল্য ছড়াকাঠামো ও পরিবহন রুট পাল্টে দিয়েছে; রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের অর্ধেকের বেশি এখন চীন-ভারত কিনছে, জানায় রয়টার্স। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের শেল উৎপাদন নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে ওপেক-প্লাসের কৌশলগত কাটছাঁটের প্রভাব অনেকটা ভেতরে খেয়ে নিয়েছে। তৃতীয়ত, জলবায়ু ইস্যুতে নীতি কড়াকড়ি বাড়লেও বৈশ্বিক জ্বালানিচাহিদা—বিশেষ করে এশিয়ার বৃদ্ধিশীল অর্থনীতিতে—এখনও তেলনির্ভর। ফলে বাজারে একই সঙ্গে ‘সবুজ ট্রানজিশন’ ও ‘ফসিল রিয়্যালিটি’—দুই প্রবণতা পাশাপাশি চলছে।

এরপর কী

ওপেক-প্লাস আগামী মাসে যখন কোটা পুনর্বিবেচনা করবে, তখন সৌদি আরবের স্বেচ্ছা উৎপাদন কাট এবং রাশিয়ার রপ্তানি ছাড় নতুন করে দামকে নাড়া দিতে পারে। IEA পূর্বাভাস দিচ্ছে, ২০২৪ সালের শেষ দিকে বৈশ্বিক দৈনিক চাহিদা ১০৩ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়িয়ে যেতে পারে, যদিও ২০২৫-এর পর ধীরগতির সম্ভাবনা স্পষ্ট। দাম বেশি থাকলে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোকে ভর্তুকি বোঝা ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামলাতে হবে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে ‘জ্বালানি নিরাপত্তা’ আরও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, বলছেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

More From Author

নির্বাচনে ৮০ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন, পুলিশের বডি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক হবে

রোনালদোর দুই গোলেও আল-নাসরের প্রস্তুতি ম্যাচে পরাজয় ৩–২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *