বিআইজিডি জরিপ: প্রায় অর্ধেক ভোটার এখনও সিদ্ধান্তহীন, সংস্কার চান ৬৮ শতাংশের বেশি
ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে সোমবার সকালে (১২ আগস্ট) ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ যৌথভাবে ‘পালস সার্ভে–৩’ প্রকাশ করেছে। ১–২০ জুলাই টেলিফোনে চালানো ৫,৪৮৯ জন ভোটারের এই জরিপে দেখা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন—এ সিদ্ধান্ত এখনও নেননি ৪৮.৫% উত্তরদাতা। বিএনপিকে ভোট দিতে চান ১২%, আওয়ামী লীগকে ৭.৩% ও জামায়াতে ইসলামীকে ১০.৪%। জরিপে ৭০% মানুষ মনে করেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, তবে সংস্কারপন্থী অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের নম্বর গত অক্টোবরে ৬৮% থেকে এখন কমে ৬৩%।
মূল তথ্য
• undecided ভোটার: ৪৮.৫%
• বিএনপির সমর্থন: ১২% (অক্টোবরে ১৬.৩%)
• আওয়ামী লীগ: ৭.৩% (অক্টোবরে ৮.৯%)
• জামায়াত: ১০.৪% (অক্টোবরে ১১.৩%)
• জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি): ২.৮% (সlight increase)
• ‘আপনার এলাকায় কোন দল জিতবে’—বিএনপি ৩৮%, আওয়ামী লীগ ৭%
• ৭০% মনে করেন আগামী নির্বাচন ‘সুষ্ঠু হবে’
• ৫১% পূর্ণ সংস্কার শেষে, ১৭% আংশিক সংস্কার করে নির্বাচন চান
• জরিপে অংশগ্রহণকারী: ৫৩% পুরুষ, ৪৭% নারী; শহর ২৭%, গ্রাম ৭৩%
প্রেক্ষাপট
গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের জরিপে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের হার ছিল ৩৮%। আট মাসের ব্যবধানে তা দশ পয়েন্ট বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থার ঘাটতি ও দ্রব্যমূল্য চাপকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা। একই সময়ে দুটি বড় দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) ঘোষিত কর্মসূচি ও মাঠে নামা সীমিত ছিল, যা ভোটারদের দ্বিধা বাড়িয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
বিশ্লেষণ
ভোটারদের অর্ধেকের বেশি সিদ্ধান্তহীন থাকা সম্ভবত দুই প্রধান দলের প্রচারে নতুন ধারণা বা মুখ দেখাতে না পারার ইঙ্গিত দেয়। বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থনে সামান্যই হলেও পতন প্রবণতা রয়েছে, যা ২০১৮–এর নির্বাচন পরবর্তী সময়ে প্রথমবার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমলেও সাম্প্রতিক ‘ডিজিটাল ক্যাম্পেইন’ তাদের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক ধরে রেখেছে বলে মির্জা এম. হাসান (BIGD) প্রাথমিক মূল্যায়নে বলেন। ৭০% মানুষ ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’ বলে আশাবাদী হওয়াটিকে সামাজিক গবেষকেরা দ্বৈত মানসিকতা বলে বর্ণনা করছেন—একদিকে সংশয়, অন্যদিকে স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আসিফ মো. শাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অগাস্টের পর রাজনৈতিক তাপমাত্রা বাড়লে সিদ্ধান্তহীন অংশের একটি বড় স্লাইস কোনও একপাশে সরে যেতে পারে।’ ট্রাস্ট-সেন্টার ফর পাবলিক অপিনিয়নের পরিচালক নাজমুল আহসান মনে করেন, ‘ঘোষিত সংস্কার রোডম্যাপ সুস্পষ্ট না হওয়ায় মানুষ “কাকে ভোট দেব” বলার আগে ফের “কী সংস্কার হবে” জানতে চাইছে।’ তিনি আরও জানান, দুর্নীতি দমন (১৭%) ও আইন-শৃঙ্খলা (৩০%)–কে জরিপে সবচেয়ে জরুরি সংস্কার হিসেবে উল্লেখ করা ঘটনাটি রাজনীতি–অপরাধ–অর্থনীতির ত্রিভুজ সংকটকে তুলে ধরে।
এরপর কী
জরিপকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চান ৩২% ভোটার; ২০২৬ সালের মধ্যে চান ৪৮%। এটা নির্দেশ করে, নির্দিষ্ট সময়সূচির চেয়ে সংস্কারের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—গণমত উপেক্ষা না করে আইন ও বিচারব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য ও বেকারত্ব ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো। BIGD-এর তথ্যভিত্তিক সুপারিশ হলো, ‘এক মাসের মধ্যে সংস্কার পরিকল্পনার রূপরেখা প্রকাশ ও নাগরিক ফিডব্যাক নেওয়া।’ বিশ্লেষকদের মতে, সেটি করলে সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের আস্থা দ্রুতই জোট বা দলে রূপ নিতে পারে, যা অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত।

