দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের আগে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক
সোমবার ১১ আগস্ট সকালে দিল্লির সংসদ ভবনের সামনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘এসআইআর’ ভোটার তালিকা সংশোধনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অবস্থান নিতে গেলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ প্রায় ২শ’ বিরোধী সাংসদ ও কর্মীকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। পুলিশ বলছে, অনুমতি ছাড়া সমাবেশের কারণে যানজট ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, সরকার ইসিকে প্রভাবিত করছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমন করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে ইসি, যেখানে সর্বোচ্চ ৩০ জন সাংসদ অংশ নেবেন।
পটভূমি
ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন কর্মসূচি ‘সিসটেমেটিক ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেসসহ ‘ইন্ডিয়া’ জোট। তাদের অভিযোগ, ভুয়া নাম যুক্ত এবং বিরোধী সমর্থকদের নাম কেটে দিয়ে সর্বভারতীয় নির্বাচনের আগে ভোট-ব্যবস্থা প্রভাবিত করা হচ্ছে। এই ইস্যুতেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রস্তাবে আজ সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে ইসি কার্যালয় ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা ছিল। তবে আগেই দিল্লি পুলিশ মিছিলের অনুমতি দেয়নি। তা সত্ত্বেও সকাল থেকেই সাংসদরা ব্যানার হাতে ‘এক মানুষ, এক ভোট’ স্লোগানে রাস্তা দখল করে বসে পড়েন।
প্রতিক্রিয়া
মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের রাহুল গান্ধী বলেন, “এটা রাজনৈতিক লড়াই নয়, সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। আমরা স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা চাই।” প্রিয়াঙ্কা গান্ধী টুইট করে লিখেছেন, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক অধিকার, তবু সরকার ভয় পেয়ে আমাদের কণ্ঠ রোধ করছে।” অন্যদিকে দিল্লি পুলিশের উপ-কমিশনার সুর্যকুমার বলেন, “শৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। আইনি নির্দেশ অমান্য করায় বিক্ষোভকারীদের অস্থায়ীভাবে আটক করা হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
এরপর কী
ইসি ইতিমধ্যে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশকে চিঠি দিয়ে দুপুর ১২টায় আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তালিকায় অনিয়ম, ইভিএম সুরক্ষা এবং লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা। বিরোধীরা বৈঠকে ইসির ‘স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করতে আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কার দাবি করার ইঙ্গিত দিয়েছে। কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, দাবি পূরণ না হলে রাজ্য পর্যায়েও ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।
বৃহত্তর চিত্র
২০২৪-এর শুরুর দিকে যেসব বড় রাজ্যে ভোট, তার আগেই ভারতের প্রধান নির্বাচনকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধ-সরকার সংঘাত তীব্র হচ্ছে। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট ইসি নিয়োগ পদ্ধতিতে সাংবিধানিক সংশোধনের সুপারিশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভোটারের আস্থায় আঁচ পড়লে তার প্রভাব কেবল দিল্লি নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচনী পরিবেশেও পড়তে পারে।
শেষ কথা
সাময়িক মুক্তি দেওয়া হোক আর মামলা চলুক—ইসি-র উপর আস্থা ফেরাতে সরকার, কমিশন ও বিরোধী পক্ষকে সমঝোতার পথ খুঁজতেই হবে। নইলে ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে ফলাফল—সবকিছু নিয়েই বাধাহীন প্রশ্ন উঠতে থাকবে, যার মূল্য দিতে হবে সমগ্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে।

