জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১২.৫ একর জমি পেল চায়না লেসো গ্রুপ, ৩৩ মিলিয়ন ডলারের কারখানা নির্মাণে প্রস্তুতি

জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১২.৫ একর জমি পেল চায়না লেসো গ্রুপ, ৩৩ মিলিয়ন ডলারের কারখানা নির্মাণে প্রস্তুতি

সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ১২.৫ একর জমি চীনের বহুজাতিক নির্মাণসামগ্রী নির্মাতা চায়না লেসো গ্রুপের হাতে তুলে দেয়। ২০২3 সালের সেপ্টেম্বরে সই হওয়া ইজারা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩২.৭৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পিভিসি ও পিইএক্স পাইপ, সৌর প্যানেল, স্যানিটারি ফিটিংসহ ১৩ ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা গড়ে তুলবে। বেজা আশা করছে, ২০ হাজার কর্মীসহ বিশ্বব্যাপী ৯৭৪ মিলিয়ন ডলার বার্ষিক আয়ের এ কোম্পানির উপস্থিতি অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা খুলে দেবে।

প্রেক্ষাপট

নরসিংদীর মেঘনা তীরবর্তী ৩০ হাজার একরের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০১৬ সালে অনুমোদিত হয়। বেজার তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ১৫টি কারখানা উৎপাদনে গেছে, আর কয়েকটি নির্মাণাধীন। সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এখানে ১০ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ টানা ও আড়াই লাখ নতুন চাকরি সৃষ্টি করা। চায়না লেসো গ্রুপকে জমি হস্তান্তর সেই রোডম্যাপ-এর সর্বশেষ ধাপ, যা বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতাও নির্দেশ করে।

এর গুরুত্ব কী

১) প্রত্যাশিত বিনিয়োগ: ৩২.৭৭২ মিলিয়ন ডলার (৩২ কোটি ৭৭ লাখ)। ২) পণ্যবৈচিত্র্য: নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ সরঞ্জাম। ৩) নেটওয়ার্ক প্রভাব: গ্রুপটির ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে স্থাপনা রয়েছে; তাতে সরবরাহ শৃঙ্খলা ও রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার বাড়তে পারে। ৪) গ্রীন টেক জোর: কোম্পানি সৌর প্যানেল ও পরিবেশ সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, যা ‘গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি পলিসি ২০২৩’-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ৫) কর্মসংস্থান: প্রথম ধাপে প্রায় ১,৫০০ সরাসরি ও অনুদৈর্ঘ্যভাবে আরেক হাজার বৈকল্য চাকরির সম্ভাবনা বেজা দেখছে।

প্রতিক্রিয়া

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, "এই হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আমরা বিনিয়োগবান্ধব, উদ্ভাবনমুখী শিল্প পরিবেশ তৈরিতে আরেক ধাপ এগোলাম। লেসোর মতো ব্র্যান্ড এলে উৎসাহিত হয়ে আরও বিদেশি কোম্পানি আসবে।" চায়না লেসো গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক লিউ চেং সাংবাদিকদের জানান, "শুধু মুনাফা নয়, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্ল্যাটফর্ম গড়াই আমাদের অগ্রাধিকার।" স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মমিন মন্তব্য করেন, "বিদেশি কারখানার কারণে কাঁচামাল, লজিস্টিকস ও আবাসন খাতে সমান্তরাল বিনিয়োগ বাড়বে, যা এলাকাবাসীর জন্য ইতিবাচক।"

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সাদিয়া হক মনে করেন, "পাইপ ও সৌর প্যানেল—দুটিই উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন খাত। সঠিক ট্যাক্স ইনসেন্টিভ ও দ্রুত কাস্টমস ছাড়পত্র নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশে আমদানি বিকল্প (ইমপোর্ট সাবস্টিটিউশন) ও রপ্তানির দু’টি পথই খুলবে।" তবে তিনি শ্রম দক্ষতা বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দেন। শিল্পপরিসর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, "বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান অনুমোদনের আগেই নির্মাণকাজ শুরু না করার বিষয়টি কঠোরভাবে মানতে হবে, না হলে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি থেকে যাবে।"

পরবর্তী পদক্ষেপ

• সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ করে ডিসেম্বর থেকে কারখানা ভবনের পাইলিং শুরু করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। • ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন চালু, আর তৃতীয় প্রান্তিকে পূর্ণ উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা। • বেজা ও শিল্প মন্ত্রণালয় যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করবে, যাতে সময়সূচি মেনে নির্মাণ, পরিবেশ ছাড়পত্র ও শ্রমিক নিরাপত্তা মানা হয়। • কোম্পানি জানিয়েছে, ৪০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় বাজারে ও ৬০ শতাংশ দক্ষিণ-এশিয়া ও আফ্রিকায় রপ্তানি করবে; এজন্য ২০২৫-এর মাঝামাঝি একটি সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব গুদাম স্থাপনের আবেদন জমা দেবে।

More From Author

বিজিআইসিতে অতিরিক্ত এমডি হলেন রাশিদা বানু, বীমা খাতে আরেকজন নারীর শীর্ষ পদে অগ্রযাত্রা

মাত্র পাঁচ বলেই ম্যাচ শেষ: আর্জেন্টিনাকে উড়িয়ে যুব বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কানাডার বিস্ময়কর জয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *