আশুগঞ্জে মহনগর এক্সপ্রেস দুই ভাগে ছিটকে ৪ ঘণ্টা অচল: যাত্রীরা ক্ষুব্ধ, তদন্তে রেলওয়ে

আশুগঞ্জে মহনগর এক্সপ্রেস দুই ভাগে ছিটকে ৪ ঘণ্টা অচল: যাত্রীরা ক্ষুব্ধ, তদন্তে রেলওয়ে

সোমবার বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে চট্টগ্রাম-ঢাকা আন্তনগর মহনগর এক্সপ্রেসের দু’টি বগির মাঝে সংযোগ খুলে যায়। সামনের অংশ স্টেশনে ঢুকে পড়লেও পেছনের পাঁচটি বগি লাইনে পড়ে থাকে। ফলে ঢাকা মুখী আপলাইন প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে এবং রাত ১০টার দিকে চলাচল স্বাভাবিক হলেও ঘন্টাখানেক দেরিতে ট্রেন চালাতে হয়। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ইঞ্জিন বিকল, বিকল্প লাইনে চলাচল ও যাত্রী ভোগান্তি মিলিয়ে পুরো করিডরে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার অশোক কুমার দাস ও ঘটনার সময় ট্রেনে দায়িত্বে থাকা গার্ড কে এম শাহীনুর ইসলাম জানান, কীভাবে কাপলিং খুলে গিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। রেল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে।

মূল তথ্য

• সময় ও স্থান: ১৮ আগস্ট বিকেল ৫:৩৫, আশুগঞ্জ স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

• ট্রেন: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর মহনগর এক্সপ্রেস (নং ৭২২)।

• ঘটনা: ‘ট’ ও ‘ঠ’ বগির মাঝের কাপলিং খুলে গিয়ে পেছনের ৫টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়।

• পরিণতি: আপলাইনে ট্রাফিক বন্ধ, পরবর্তী তিনটি ট্রেন (মোহনগর গোধূলি, জয়ন্তিকা, কর্নফুলী) এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি।

• উদ্ধার ও মেরামত: ভৈরব জংশনে বগিগুলো সরিয়ে এনে রাত ১০টায় লাইন ক্লিয়ার; একই পথে পাঠানো কর্নফুলী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনও মাঝপথে বিকল হয়।

• হতাহত: কেউ আহত হননি।

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল রুটটি রাজধানী ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে প্রধান মালামাল ও যাত্রিবাহী সংযোগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাপলিং ছুটে গিয়ে বগি পড়ে যাওয়ার মতো ছোটখাটো ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে, যার বেশির ভাগই রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতির সাথে সংশ্লিষ্ট বলে শীর্ষ প্রকৌশলীরা স্বীকার করেন। রেলওয়ে গত বাজেটে নতুন কোচ-ইঞ্জিন কেনার অর্থ পেলেও পিটলাইন ও সিগন্যালিং আধুনিকায়নে অগ্রগতি ধীর।

প্রতিক্রিয়া

বগিতে আটকে পড়া যাত্রী মোহাম্মদ উজ্জ্বলের ভাষায়, ‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি, তখন বিপরীত দিক থেকে আরেকটি ট্রেন এলে কি হতো?’ স্টেশনে অপেক্ষমাণ অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. জামাল বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি, কার দোষে এ ভোগান্তি জানতে চাই।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে রেলওয়ের ‘নূন্যতম নিরাপত্তা মান’ নিশ্চিত করতে দাবি তোলেন।

এর গুরুত্ব কী

১) ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন; কয়েক ঘণ্টার অচলাবস্থা সরিয়ে নেয় বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনকেও।

২) সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটি থেকেও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—যা সোমবার অল্পের জন্য এড়ানো হয়েছে।

৩) ২০২১ সালের দুর্গাপুর, ২০২৩ সালের আক্কেলপুরের মতো অন্যান্য বিচ্ছিন্নতার ঘটনাও এখনো তদন্ত শেষ না হওয়ায় নিরাপত্তা সংস্কারের চাপ বাড়লো।

পরবর্তী পদক্ষেপ

• পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, কর্মকর্তারা জানান।

• বগির কাপলিং, ব্রেকলাইন ও ইঞ্জিন ফিটনেস সার্টিফাই করার নিয়মটি প্রতিটি যাত্রার আগে বাধ্যতামূলক করতে সুপারিশ করা হবে।

• যাত্রী অধিকার সংগঠন ‘রেলপথ বাঁচাও আন্দোলন’ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।

• আগামী সপ্তাহে রেল মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাম্প্রতিক পাঁচটি বিচ্ছিন্নতা ঘটনা একসঙ্গে পর্যালোচনা করার কথা আছে।

More From Author

ভোটের আগে সংস্কার চান অর্ধেকের বেশি, সিদ্ধান্তহীন ৪৮% ভোটার—বিআইজিডি জরিপ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *