আদালত শক্তি খর্ব করলে ১৯২৯-এর মন্দা ফিরবে: শুল্ক যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের সতর্ক বার্তা

আদালত শক্তি খর্ব করলে ১৯২৯-এর মন্দা ফিরবে: শুল্ক যুদ্ধ ঘিরে ট্রাম্পের সতর্ক বার্তা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর আগ্রাসী শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ১১ আগস্ট সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি দাবি করেন, আদালত যদি তাঁর শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা অবৈধ ঘোষণা করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ১৯২৯ সালের মতো বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়বে।
মসৃণভাবে চলা শেয়ারবাজার, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও ‘শত শত কোটি ডলার রাজস্ব প্রবাহ’-এর কথা তুলে ট্রাম্প বলেন, তাঁর নীতি বদলালেই দেশের সম্পদ, শক্তি ও ক্ষমতা ‘মুহূর্তে ধূলিসাৎ’ হয়ে যাবে। সতর্কবার্তা এসেছে এমন সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর প্রশাসনের আপিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট কোর্টে ঝুলে আছে। শেষ বিচারে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে ধারণা আইনজীবীদের।

পটভূমি

২০১8 সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (সেকশন ২৩২) অধীনে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসান। পরে চীনসহ নানা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেন। ক্ষুব্ধ হয়ে শতাধিক আমদানিকারক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা করে। চলতি বছরের মে মাসে আদালত রায় দেয় যে, কংগ্রেস প্রদত্ত ক্ষমতার সীমা ট্রাম্প লঙ্ঘন করেছেন। প্রশাসন এরপর ফেডারেল সার্কিটে আপিল করে। ১১ সদস্যের বেঞ্চে অন্তত কয়েকজন বিচারক শুনানিতে মন্তব্য করেন, বর্তমান আইন প্রেসিডেন্টকে এমন ‘ইচ্ছামতো’ শুল্ক বসানোর লাইসেন্স দেয় না।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ইসাবেলা ওয়েবের মতে, ‘শুল্ক জনগণের ওপর অপ্রত্যক্ষ কর; এগুলো কমলে অর্থবাজার ভেঙে পড়বে—এ দাবির পক্ষে তথ্য নেই।’ হোয়াইট হাউসের সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা গ্যারি কোহেন সিএনএনকে বলেন, ‘বড় কথা হল, শুল্ক তুললেও মন্দা আসে না; বরং বাড়ালে ভোক্তার খরচ বাড়ে।’ ১৯২৯-এর মহামন্দার ইতিহাসবিদ ডগলাস আরউইন মনে করিয়ে দেন, সে সময় “স্মুট-হলি” আইনে শুল্ক বেড়েছিল, কিন্তু সঙ্গে ব্যাংক সংকট, আর্থিক খাতে নীতিগত ভুলও ছিল। ‘মাত্র একটি আদালতি সিদ্ধান্তে একই মাত্রার ধস নামবে’— এমন আশঙ্কা ‘রাজনৈতিক বাড়াবাড়ি’ বলেই মনে করেন তিনি।

প্রতিক্রিয়া

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রিচি টরেস ট্রাম্পের পোস্টকে ‘নীতিগত ব্ল্যাকমেইল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আইন-আদালত মানলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে—এমন বক্তব্য গণতান্ত্রিক দেশের জন্য বিপজ্জনক ইঙ্গিত।’ মার্কিন চেম্বার অব কমার্স জানায়, ‘আইনি প্রক্রিয়াকে ভয় দেখিয়ে শুল্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা ব্যবসা ও ভোক্তা উভয়ের ক্ষতি ডেকে আনবে।’ রিপাবলিকান দলের ভেতরেও মতভেদ আছে; সিনেটর র‍্যান্ড পল ফক্স নিউজকে বলেন, ‘কংগ্রেসকেই শুল্ক ঠিক করার অধিকার থাকা উচিত।’

এর গুরুত্ব কী

নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও বিশ্ববাজারে ফলাফল আগেই ধাক্কা দিতে পারে। ট্রাম্পের হুমকি মূলত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বনাম নির্বাহী ক্ষমতার লড়াইকে উসকে দিচ্ছে। সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষে গেলে হোয়াইট হাউস ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃতভাবে আমদানি শুল্ককে কূটনৈতিক চাপের হাতিয়ার বানাতে পারে। উল্টো রায় আসলে অতিরিক্ত শুল্ক কমানোর চাপ বাড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা কমিয়ে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ঠাণ্ডা করতে সহায়তা করতে পারে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

ফেডারেল সার্কিট কোর্ট আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রায় দিতে পারে। যেকোনো পক্ষই এরপর ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ‘সার্ট’ আবেদন করবে। সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করলে মামলাটি ২০২৫ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত ঝুলে যেতে পারে। সর্বোচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশে শুল্ক সাময়িক বলবৎ থাকবে কি না—সেটিই ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রশ্ন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছেন, প্রয়োজনে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ‘আরও বড় ধরনের শুল্ক-প্যাকেজ’ আনবেন।

More From Author

খুলনা সিটি করপোরেশনের গৃহকর আদায়ে রেকর্ড, লক্ষ্যের ১০৪ শতাংশ অর্জন

যুক্তরাজ্যের ‘নির্বাসন আগে, আপিল পরে’ নীতি সম্প্রসারণ: বাংলাদেশিদের জন্য কী ঘটতে পারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *