সীমান্তে ‘পুশ-ইন’ বৃদ্ধি: ভারতীয় নাগরিকদের দিল্লিতে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত ঢাকা

সীমান্তে ‘পুশ-ইন’ বৃদ্ধি: ভারতীয় নাগরিকদের দিল্লিতে ফেরত পাঠাতে প্রস্তুত ঢাকা

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার (১৬ জুলাই) সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় দুই হাজার লোককে ভারত বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দিয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেন, যাদের প্রকৃত পরিচয় ভারতীয়, তাদের ‘ডিল ধরে’ ফেরত পাঠানো হবে এবং এ বিষয়ে দুই দেশের বিদ্যমান সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কাঠামো কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে তিনি সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা বন্ধে জোর দেন। ঘটনার সময় ও জায়গা: সীমান্তের বিভিন্ন অরক্ষিত পয়েন্ট, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ–বাংলাদেশ সীমান্ত; ঘোষণাটি ঢাকায়। কী নিয়ে আলোচনা: পুশ-ইন, সীমান্ত হত্যা এবং শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশ-মার্কিন আলোচনা।

প্রেক্ষাপট

আন্তঃসীমান্ত ‘পুশ-ইন’ নতুন ঘটনা নয়, তবে করোনার পর সীমান্তে নজরদারি ঢিল হতেই সংখ্যাটা লাফিয়ে বেড়েছে বলে দুই দেশের মানবাধিকার সংগঠন জানায়। ২০১৫ সালে ঢাকা–দিল্লি ‘কোঅর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ (সিবিএমপি) চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, দুই পক্ষই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে প্রাথমিক যাচাই সেরে বৈধ প্রক্রিয়ায় প্রত্যর্পণ করবে। বাস্তবে সীমান্ত গার্ডরা প্রায়ই সন্দেহভাজন অভিবাসীকে রাতের আঁধারে কাঁটাতারের ওপারে ঠেলে দেয়—যাকে স্থানীয়রা পুশ-ইন বা পুশ-ব্যাক বলে। বিরোধী দলগুলো ঘটনাটিকে অভিবাসন রাজনীতি ও আসন্ন ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেও জুড়ে দেখছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

• মে মাসের পর থেকে আনুমানিক ২,০০০ জনকে বাংলাদেশ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে (বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাব)।

• চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিএসএফ গুলিতে বাংলাদেশি মৃত্যুর সংখ্যা ২০ (অধিকার ও বিএসএফ তথ্য মিলিয়ে)।

• ২০১০-২০২4: একক মিটিং পয়েন্টের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ৫০০ জনকে যৌথ যাচাই শেষে নিজ নিজ দেশে ফেরত নেওয়া হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘আমাদের নাগরিক হলে আমরা ফিরিয়ে নেব, কিন্তু ভারতীয় হলে ভারতেরই দায়িত্ব।’ সীমান্তে মৃত্যু ঘটলে বিচার দাবি করবে বলেও ঢাকার অবস্থান।

ভারত: এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ‘বাংলাভাষী’দের ঠেলে দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞরা: সাবেক বিদেশ সচিব মোহাম্মদ তোয়াব খান মনে করেন, “কারিগরি কমিটি কাজে লাগাতে না পারলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বাড়বে, যার মাশুল গুনবেন সীমান্তবাসী।” মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “অভিবাসন প্রশ্নে ঢাকাও মাঝে মাঝে নিজেদের নাগরিক যাচাইয়ে দেরি করে—যা পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।”

এর গুরুত্ব কী

১. নিরাপত্তা: অনিয়মিত অনুপ্রবেশ সন্ত্রাসবাদ ও পাচারের ঝুঁকি বাড়ায়—দুই দেশেরই উদ্বেগ। ২. মানবাধিকারের দিক: মধ্যরাতে খোলা সীমান্তে শিশু-নারীসহ মানুষকে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত। ৩. রাজনৈতিক বার্তা: দিল্লি-কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে আস্থার পরীক্ষাও বটে; বিরোধী রাজনীতিকরা বিষয়টি ভোটের সময় হাতিয়ার করতে পারেন।

কিভাবে এই পর্যন্ত এলাম

• ২০১৫: সিবিএমপি সই।

• ২০১৯: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে উদ্বেগ, অনুপ্রবেশ বিতর্ক তীব্র হয়।

• ২০২১-22: কোভিডের সময় সীমান্ত বন্ধ থাকলেও পুশ-ইন বন্ধ হয়নি; ২০২৩-এ সংখ্যা বাড়ে।

• ১৬ জুলাই ২০২5: ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘বাধ্য হলে ফেরত পাঠাব’ ঘোষণা।

পরবর্তী পদক্ষেপ

১. সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক আগামী সপ্তাহে কলকাতায় হওয়ার কথা; ঢাকার পক্ষ থেকে পুশ-ইন ও গুলি দু’টিই এজেন্ডায় থাকছে।

২. জেলা প্রশাসক-ডিসিপি পর্যায়ে পাইলট প্রকল্প—সন্দেহভাজন ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য তাৎক্ষণিক শেয়ার।

৩. পৃথকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত হত্যা কমাতে ‘নন-লিথ্যাল অস্ত্র’ ব্যবহারের অনুরোধ পুনরায় তুলবে।

৪. মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, সীমান্তে মাইগ্রেশন সহায়তা কেন্দ্র খুলে খাদ্য, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দিতে হবে।

শেষ কথা

ঢাকা-দিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে পুশ-ইন ও সীমান্ত হত্যা দুইই স্পর্শকাতর ইস্যু। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও জনমনে আস্থাহীনতা—তিন ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ফাইলচাপা নয়, মাঠপর্যায়ের বাস্তবসম্মত সমাধানই এখন জরুরি।

More From Author

হিমালয়ের পর্যটন হটস্পটে ডিম ৬০০ রুপি, ঘরে ভাড়া মাত্র ১ হাজার!

কাঁঠাল-মুড়ি খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, বাড়ির খাবার নিরাপত্তা প্রশ্নে আলোচনায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *