সকালের গোসল না করলে শরীরে কী ঘটে: বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ঢাকা, ৩০ জুলাই: অনেকেই ঘুম থেকে উঠে চা-নাস্তার আগে গোসল করেন, আবার অনেকে ব্যস্ততা বা ঠান্ডার অজুহাতে এড়িয়ে যান। কিন্তু প্রতিদিন সকালে গোসল না করলে ত্বক, শ্বাসতন্ত্র ও মানসিক স্বাস্থ্য—সবকিছুতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ডেইলি জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা বলছে, রাতে জমে থাকা ঘাম, তেল ও ধুলা যদি সকালে ধোয়া না হয়, তাহলে ব্রণ থেকে শুরু করে দুর্গন্ধ, ক্লান্তি甚至 স্ট্রেস বাড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই মাত্র ১০ মিনিটের সকালের গোসল কর্মক্ষমতা বাড়ায়, কর্টিসল কমিয়ে মন ভালো রাখে এবং রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সচল রাখে।
পটভূমি
বাংলাদেশে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম দ্রুত জমা হয়। ফলে শরীরকে দিনের শুরুতেই পরিষ্কার রাখা অনেকের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। তবে শীতকাল বা ভোরে কাজের তাড়ায় অনেকেই এই ধাপটি এড়িয়ে যান। ডেইলি জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক মেডিকেল জার্নাল ও ডার্মাটোলজি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, নিয়মিত সকালের গোসলের সুবিধা শুধু পরিচ্ছন্নতায় থেমে নেই; এটি হরমোন, স্নায়ু ও রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করে।
মূল তথ্য
• ঘাম ও মৃত কোষ জমে থেকে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হলে ব্রণ, ফুসকুড়ি ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ বাড়ে।
• সকালে হালকা ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে মস্তিষ্ক সজাগ হয়, মনোযোগ বাড়ে।
• কর্টিসল কমে মানসিক প্রশান্তি আসে, ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা কমে।
• হাঁপানি বা ধুলা-অ্যালার্জি থাকলে রাতের জমা অ্যালার্জেন দূর হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বস্তিদায়ক হয়।
• বিপাকক্রিয়া সক্রিয় হয়, ফলে যারা শরীরচর্চা বা কায়িক শ্রম করেন, তাদের পেশি দ্রুত সতেজ হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহমিদা নূর বললেন, "রাতে ঘাম ও তেল মিশে ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য তৈরি করে। সকালে ধোয়া না হলে ত্বকে ইনফেকশন ও দুর্গন্ধ দুটোই বাড়ে।" পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবৃত্তবিদ ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলছেন, "কুসুম গরম পানিতে তিন-চার মিনিট গোসল রক্তচাপ সামান্য বাড়িয়ে দেহকে জাগিয়ে তোলে, যা অফিস শুরুর আগে প্রাকৃতিক কফির মতো কাজ করে।" তিনি অবশ্য ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি থাকলে মাথা না ভিজিয়ে গোসল শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এর গুরুত্ব কী
বাংলাদেশের শহুরে অফিস পরিবেশে দীর্ঘ সময় বসে কাজ, যানজট ও দূষণে থাকা মানুষদের জন্য সকালের গোসল মন ও শরীর—দুটোই প্রস্তুত রাখে। সামাজিক দিক থেকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। স্বাস্থ্য খরচ বাঁচানো থেকে শুরু করে কর্মক্ষমতা ধরে রাখার মতো অর্থনৈতিক সুফলও রয়েছে।
শেষ কথা
গোসল একটি অত্যন্ত সাধারণ, কম খরচের স্বাস্থ্য-অভ্যাস। ব্যস্ততা, ঠান্ডা কিংবা আলস্য—কোনো কারণেই এটি বাদ না দিয়ে দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় ব্যয় করলে ত্বক, মন এবং দেহ পুরোদিন তরতাজা থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিদিন পুরো শরীর ভেজানো সম্ভব না হলে অন্তত মুখ, গলা, হাত-পা গরম পানিতে ধুয়ে নেওয়াও অনেকটাই উপকার দেবে।