মস্কোতে হামলা নয়, ৫০ দিনের আল্টিমেটামই ট্রাম্পের কৌশল

Kremlin.ru, CC BY 4.0 https://creativecommons.org/licenses/by/4.0, via Wikimedia Commons

মস্কোতে হামলা নয়, ৫০ দিনের আল্টিমেটামই ট্রাম্পের কৌশল

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ‘মস্কোতে হামলা’ করা উচিত হবে না। একই সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার সময়সীমা দিয়েছেন, অন্যথায় রাশিয়ার সব আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, ৪ জুলাই ট্রাম্প ব্যক্তিগত ফোনে জেলেনস্কিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন—যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিলে কি ইউক্রেন মস্কো আক্রমণ করতে পারবে? তা নিয়েই উত্তাপ বাড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর তিন বছর পর ট্রাম্পের এ ঘোষণায় ওয়াশিংটন, কিয়েভ আর মস্কো—তিন দিকেই কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ নতুন মোড় নিয়েছে।

প্রেক্ষাপট

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ জুলাই পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পরদিনই ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ফোন করেন। ফোনে তিনি জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটাকামস বা সমমানের ক্ষেপণাস্ত্র পেলে ইউক্রেন মস্কো পর্যন্ত আঘাত হানতে রাজি আছে কি না। প্রকাশ্যে বিষয়টি উঠতেই মঙ্গলবার ট্রাম্প স্পষ্ট করেন, “না, রাজধানীতে হামলা করা ভালো পথ নয়।” তার আগে সোমবার তিনি জার্মানি হয়ে পাঠানো প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের একটি চালান কিয়েভের পথে রয়েছে বলে জানান এবং যুদ্ধ থামাতে ৫০ দিনের ‘সর্বশেষ সুযোগ’ ঘোষণা করেন।

প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সদস্য দেশগুলো দ্রুত ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে বলে ডয়েচে ভেলেসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। জেলেনস্কির দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও কিয়েভের এক নিরাপত্তা উপদেষ্টা রয়টার্সকে বলেছেন, “মিত্রদের সমর্থন থাকলে আমরা রাশিয়ার লজিস্টিক লাইনে আঘাত করব, মস্কোই হোক বা অন্য কোথাও।” রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া ঝাখারোভা পাল্টা মন্তব্য করেন, “নতুন শুল্ক দিয়ে রাশিয়াকে ভয় দেখানো যাবে না, বরং বিশ্ববাজারে টালমাটাল অবস্থা আরও বাড়বে।” meanwhile, রিপাবলিকান দলের ভেতরেই ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘অবস্ফুট’ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন সিনেটর মিট রমনি।

বিশ্লেষণ

আমেরিকার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির কৌশল বিশ্লেষক ড. সাব্রিনা কর্নেলো জানান, “ট্রাম্প একই সঙ্গে কঠোর শুল্ক হুমকি ও ‘মস্কো আক্রমণ নয়’ বার্তা দিয়ে দুই পক্ষের কাছ থেকেই কিছু ছাড় আদায় করতে চাইছেন।” ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে উপস্থাপন করা তার মূল লক্ষ্য হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ পদক্ষেপ বাস্তবসম্মত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। মার্কিন কংগ্রেসে গত সপ্তাহেই ৬১ বিলিয়ন ডলারের নতুন ইউক্রেন সহায়তা বিল আটকে আছে; ট্রাম্পপন্থী আইনপ্রণেতারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের আল্টিমেটাম বাস্তবায়নে স্পষ্ট রূপরেখা নেই। দ্বিতীয় দিকে, মস্কোর ওপর শতভাগ শুল্ক বসালে গ্যাস ও তেলের দাম বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে, যার ধাক্কা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।

এরপর কী

ট্রাম্পের ৫০ দিনের কাউন্টডাউন শেষ হবে ৩ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ওয়াশিংটন রাশিয়ান তেল, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি নিষিদ্ধ করার আইনি প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্রগুলো ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে। পুতিন যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হন, তা হলে উত্তরোত্তর শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি ইউক্রেনকে আরও দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা আছে বলে পেন্টাগন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই আল্টিমেটাম দ্রুত কোনও সমাধান না-ও আনতে পারে; তবে পশ্চিমা জোটকে একই মঞ্চে রাখতে ট্রাম্পের চাপ অব্যাহত থাকবে। কিয়েভ ইতিমধ্যে পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত ‘গভীর স্ট্রাইক ব্রিগেড’ গঠন করছে, যাতে রুশ ভূখণ্ডের ৫০০ কিলোমিটার ভেতরে আঘাত হানা সম্ভব হয়। মাসকাবারি রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি তাই আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও উত্তপ্ত, কিন্তু একই সঙ্গে অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।

More From Author

কুমিল্লার দেবিদ্বারে আলাদা দুই পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

আইসিসির নতুন র‍্যাঙ্কিংয়ে নজর কাড়লেন রিশাদ, জেল্লা বাড়াল বাংলাদেশের দল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *