বৃষ্টি থেমেই ধোঁয়াটে ঢাকা: এয়ার কোয়ালিটি সূচকে আবারও শীর্ষে দূষণ
বর্ষার বৃষ্টিতে কয়েক দিন খানিকটা স্বস্তি ফিরেছিল, কিন্তু বুধবার সকাল ৯টার পর সূর্য উঠতেই ঢাকার বাতাসে আবারও ধূলিকণার দাপট। বায়ুমান সূচকে (একিউআই) নগরীর স্কোর দাঁড়ায় ৯০, যা ‘মাঝারি’ হলেও স্পর্শ করছে ‘সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ের দোরগোড়া। একই সময়ে দূষিত শহরের বৈশ্বিক তালিকায় রাজধানী উঠে আসে ২৪-তম স্থানে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম আইকিউএয়ার-এর তথ্য বলছে, পাঁচ ধরনের প্রধান দূষক— পিএম২.৫, পিএম১০, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনো-অক্সাইড— মিলেই এই সূচক নির্ণয় করা হয়। মৌসুমি তুলনায় বর্ষায় সাধারণত দূষণ কম থাকার কথা, কিন্তু নির্মাণকাজ, যানজট ও শিল্প-উৎসর্জনের কারণে অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন নেই।
প্রেক্ষাপট
গত কয়েক বছর ধরেই শীতকাল থেকে বসন্তের আগ পর্যন্ত ঢাকায় একিউআই ১৫০-এর ওপরে থেকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রা পেরিয়ে যায়। বর্ষা এলেই বৃষ্টি ধুলিকণা ধুয়ে নেয়, তবে মেট্রো রেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প ও রাস্তার অনবরত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এবারও সূচক দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী ১০০-এর নিচে স্কোরকে তুলনামূলক নিরাপদ ধরা হলেও, একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে ৭০-এর ওপরেই শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• আজ সকাল ৯টা: ঢাকার একিউআই ৯০
• দূষিত শহরের তালিকায় অবস্থান: ২৪-তম
• শীর্ষ শহর কিনশাসা (কঙ্গো): একিউআই ১৮৬
• একিউআই ১০১-১৫০ হলে ঝুঁকি বাড়ে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের
• ঢাকায় পিএম২.৫ মান আদর্শ মাত্রার তুলনায় গড়ে ৬-৭ গুণ বেশি (বুয়েট, ২০২৪)
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম খুরশীদ-আলম বলেন, “বর্ষায় বৃষ্টিপাত না থাকলে বাতাস স্থির থাকে, তখন নির্মাণসাইট ও যানবাহনের ধোঁয়া থিতিয়ে না গিয়ে ভাসমান থাকে।” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুন্নাহার জানান, ৮০ পেরোলেই অ্যালার্জি, ব্রঙ্কাইটিস ও চোখের অসুখ বেড়ে যায়; দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। তিনি সংবেদনশীল শ্রেণির মানুষকে বাইরে মাস্ক ব্যবহার ও দীর্ঘ সময় রোদে কস্ট্রাকশন-এরিয়ায় না থাকার পরামর্শ দেন।
এরপর কী
পরিবেশ অধিদপ্তর জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল কোর্ট বাড়ানো, রাতের বেলা পানি ছিটিয়ে রাস্তা ভেজা এবং নির্মাণ প্রকল্পগুলোর ওপর ধুলা নিয়ন্ত্রণে নরমাল লেভেল নির্ধারণ করতে সুপারিশ করেছে। ঢাকার দুই সিটির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২০টি স্বয়ংক্রিয় বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বসানো হবে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞরা পর্যায়ক্রমে পুরোনো যানবাহন অপসারণ, ইটভাটায় ‘হাইব্রিড হফম্যান’ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করা ও নির্মাণ নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগের তাগিদ দিচ্ছেন।