গোপালগঞ্জের হামলা ও চার প্রাণহানির পর ফরিদপুরে এনসিপির বিক্ষোভ, তদন্ত দাবি
বুধবার ১৬ জুলাই ফরিদপুর শহরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছে। দলটি জানায়, আগের দিন গোপালগঞ্জে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের বহরে হঠাৎ হামলা হয়, যেখানে অন্তত চারজন নিহত ও বহু আহত হন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার না পেলে বড় ধরনের কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে এনসিপি। পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তদন্ত শুরু হয়েছে, তবে এখনও কাউকে আটক করা হয়নি।
ঘটনাপ্রবাহ
মঙ্গলবার বিকেলে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায় এনসিপির সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় ফিরছিল দলের শীর্ষ নেতাদের একটি বহর। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সড়কে বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষ বাধে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসি বাংলা ও নয়াদিগন্তকে জানিয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রেক্ষাপট
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করছে। নিবন্ধন পেতে লড়া এনসিপি সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। এমন অবস্থায় শাসক-দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে মাঠদখলকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে—গোপালগঞ্জের ঘটনাও তারই উদাহরণ।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• নিহত: ৪ জন (হাসপাতাল নিশ্চিত)
• আহত: নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তবে ২০-এর বেশি বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ধারণা করছে
• অভিযুক্ত: অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ
• প্রতিবাদ কর্মসূচি: ফরিদপুরে এক ঘণ্টার মিছিল, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০০
প্রতিক্রিয়া
ফরিদপুরের পথসভায় এনসিপির জেলা প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা দাবি করেন, "প্রশাসনের নীরব সম্মতিতেই হামলা হয়েছে।" কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়কারী এসএম জাহিদ হোসেন ঘোষণা করেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না দেখলে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করবেন। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এটি নিজেদের দ্বন্দ্ব, আমাদের সাথে সম্পর্ক নেই।" জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষণ
দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন নয়, তবে ছোট দলগুলো যখন জেলা পর্যায়ে সক্রিয় হয় তখন সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক বদরুল আলম মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনী অবস্থায় প্রশাসনের ‘প্রভূত আন্তরিকতা’ না দেখালে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। নির্বাচন কমিশনকে মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এরপর কী
গোপালগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে ওসি মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় টহল জোরদার ও রাজনৈতিক সমাবেশে ‘নো অবজেকশন’ পেতে নতুন করে অনুমতি নিতে বলছে জেলা প্রশাসন। এনসিপি শুক্রবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে, নইলে নির্বাচনী মৌসুমের শুরুতেই সহিংস ধারাবাহিকতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে।