গোপালগঞ্জের সহিংসতা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারকে জামায়াত আমিরের আহ্বান
বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-র আমির ডা. শফিকুর রহমান গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত পদযাত্রায় হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশেরই অংশ—সরকার যদি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ইতিহাসের দায় তাদেরই বহন করতে হবে।" একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের শান্ত থাকতে এবং "ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে" ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এনসিপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মসূচি শুরুর আগে প্রশাসনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হলেও, সমাবেশ ও পরে গাড়িবহরে একাধিকবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হলেও, পুলিশ উপস্থিত ছিল না বলে দলটির অভিযোগ।
পটভূমি
বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর হামলার অভিযোগ নতুন নয়, তবে এ ঘটনাটি রাজনৈতিক বিচারে সংবেদনশীল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতির নিজ জেলা গোপালগঞ্জে বুধবার সকাল থেকে এনসিপি একটি পদযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা শহরের পৌরপার্কে বক্তব্য দেওয়ার আগেই, বিভিন্ন স্থানে তাদের মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও লাঠি দিয়ে হামলা চালানো হয়। সমাবেশ শেষ করে নেতারা যখন জেলাশহর ত্যাগ করছিলেন, তখনও গাড়িবহর আক্রান্ত হয় বলে দলটির অভিযোগ। হামলায় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর হয় এবং অন্তত ছয়জন আহত হন। এ সময় আশপাশের সড়কে টিয়ারশেল বা পুলিশ টহর দেখা যায়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতিক্রিয়া
ডা. শফিকুর রহমান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "কার্যত মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনও উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।" দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে "পুরো দায় সরকারের ওপরেই বর্তাবে" বলেও সতর্ক করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি এলাকার বাসিন্দাদের 'উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকার' অনুরোধ জানান এবং আল্লাহর কাছে ন্যায়ের পক্ষে সাহায্য কামনা করেন।
সরকার বা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য দেননি। তবে জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "বিগত নির্বাচনবিরোধী কর্মকাণ্ড"-এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী "স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া" দেখিয়েছে।
বৃহত্তর চিত্র
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোর মাঠের রাজনীতি গতি পাচ্ছে, আর সঙ্গে বাড়ছে সহিংসতার ঝুঁকি। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল বরাবরই বলছে, মিটিং-মিছিলের অনুমতি পেলেও শেষ মুহূর্তে 'স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী'র বাধায় তাদের কর্মসূচি ভেস্তে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, শাসক দলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জে এ ধরনের ঘটনা বিরোধীদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে পারে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ আরও সংকীর্ণ করে তোলে।
এরপর কী
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হামলার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে; অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। এনসিপি ইতিমধ্যে ঢাকায় দলীয় ফোরামে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে বসেছে। দলীয় নেতারা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে গোপালগঞ্জে গণসাক্ষর কর্মসূচি ও মানববন্ধন করতে চান তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের বিচারের উদ্যোগ না নিলে সামনের মাসগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি আরও সহিংস রূপ নিতে পারে, যা নির্বাচনী পরিবেশকে উত্তপ্ত করবে।
শেষ কথা
রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ—দুটি ছাড়া গোপালগঞ্জের মতো ঘটনাপ্রবাহ থামানো কঠিন হবে। সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটিই ঠিক করবে অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে নাকি দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার দিকে যাবে বাংলাদেশ।