গাজীপুর-বিমানবন্দর বিআরটি: বাস আসতে আরও দুই বছর, ব্যয় ছুঁয়েছে ৬,২৪০ কোটি
গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তা থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি–৩) করিডরে যে বাস চলার কথা, তার জন্য এখনও একটিও বাস কেনা হয়নি। প্রকল্প-অনুমোদনের ১২ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার চতুর্থবারের মতো সংশোধিত প্রস্তাব করেছে, যাতে ১৩৭টি ডিজেলচালিত এসি ও ৫০টি ইলেকট্রিক বাস কেনা, আইটিএস এবং চার্জিং স্টেশন বসানোসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬,২৪০ কোটি টাকা—প্রাথমিক বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, দরপত্র আহ্বান থেকে বাস হাতে পেতে কমপক্ষে আর ১৮ মাস লাগবে, রক্ষণাবেক্ষণ অপারেটর নিয়োগসহ পূর্ণযাত্রীসেবা পেতে সময় গড়াবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি।Meanwhile, নির্মাণাধীন স্টেশন, পদচারী সেতু ও উড়ালসড়ক অসম্পূর্ণ থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে এবং অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পটভূমি
২০১২ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এএফডি ও সরকার যৌথ অর্থায়নে বিআরটি-৩ প্রকল্প অনুমোদন পায়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে, কিন্তু মাঠে নির্মাণ শুরুই হয় ২০১৭-তে। এর পর থেকে আর্থিক বরাদ্দে অসঙ্গতি, ঠিকাদার বদল, করোনা মহামারি এবং ২০২৩ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বারবার সময় ও ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বাস কেনা নিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে তিনবার—আর্টিকুলেটেড, পুরো ইলেকট্রিক ও এখন ডিজেল-ইলেকট্রিক মিশ্র মডেল।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• অনুমোদনের বছর: ২০১২
• পরিকল্পিত পরিবহন সক্ষমতা: পিক আওয়ারে ৩০ সেকেন্ড অন্তর বাস, ভ্রমণ-সময় ৩৫–৪০ মিনিট
• স্টেশন: ২৫টি, যার একটিও এখনো সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়
• নতুন বাস ক্রয়ের প্রস্তাব: ১৮৭টি (ডিজেল ১৩৭, ইলেকট্রিক ৫০)
• বাস ও আইটিএস খাতেই ব্যয়: ৫৫০+ কোটি টাকা
• প্রকল্পের মোট আপডেটেড বাজেট: ৬,২৪০ কোটি টাকা (আদি বাজেট ২,০৪০ কোটি)
• সম্ভাব্য “ভায়াবিলিটি গ্যাপ” ভর্তুকি: ২৪৬ কোটি
• নির্ধারিত নতুন সময়সীমা: জুন ২০২৯ পর্যন্ত
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, "বিআরটি স্বল্প ব্যয়ে গণপরিবহন বাড়ানোর সেরা পদ্ধতি, কিন্তু অতিরিক্ত উড়ালসড়ক ও বিলাসী অবকাঠামো যোগ করে প্রকল্পটিকে করিডর উন্নয়নে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে, কার্যকারিতা কমেছে।" তার মতে, ডিজেল ও ইলেকট্রিক মিশ্রণ দীর্ঘমেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ জটিল করবে। পরিবাহন–অর্থনীতিবিদ মোকাদ্দেস আলী বলেন, "বাস না নামিয়ে রেলিং ও স্টেশন ফেলে রাখায় সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে, চুরি হচ্ছে; ফলে আবার ব্যয় বাড়বে।"
প্রতিক্রিয়া
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মঈনউদ্দিন জানিয়েছেন, সংশোধিত প্রস্তাবে তিনি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমিয়েছেন—জিপ ও অফিস ভবন বাদ দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের ভোগড়া বাসিন্দা কলেজ অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, "দশ বছর ধরে জ্যামে হাঁসফাঁস করছি, কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ উল্টো বেড়েছে।" সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই প্রকল্পকে "চোখধাঁধানো কিন্তু যাতায়াতে অনুপযোগী" বলে সমালোচনা করছেন।
এরপর কী
সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের পর বাস ও আইটিএসের আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হবে, যা পেতে ৬–৮ মাস সময় লাগতে পারে। চুক্তি সই হলে বাস নির্মাণ ও সরবরাহে প্রায় এক বছর এবং পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও অপারেটর নির্বাচন আরও ছয় মাস ধরা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে সীমিত যাত্রীচালু (সফট লঞ্চ) করা সম্ভব হবে। তবে স্টেশন ও পদচারী সেতুর বাকি কাজ সম্পন্ন, রেলিং বসানো এবং চার্জিং অবকাঠামো স্থাপন সময়মতো না হলে নতুন সময়সীমাও অতিক্রম করতে পারে বলেই সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।