একঘেয়ে অফিসকে চাঙা করতে পাঁচ সহজ অভ্যাস বদলেই মিলছে নতুন উদ্যম

একঘেয়ে অফিসকে চাঙা করতে পাঁচ সহজ অভ্যাস বদলেই মিলছে নতুন উদ্যম

ঢাকার কর্পোরেট ও সরকারি দপ্তরে কর্মরত বহু পেশাজীবী প্রতিদিন একই যে রুটিন ও চাপের মধ্যে পড়েন, সেটাই একসময় ‘বোরআউট’-এ পরিণত হয় বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি ফিচার প্রতিবেদনে (১৬ জুলাই, ঢাকা) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচটি ছোট পরিবর্তন এনে কর্মস্থলকে আবার প্রাণবন্ত করে তোলার। ডেস্ক সাজানো থেকে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সময়, এমন নানামুখী টিপস অফিস-জীবনের মানসিক চাপ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কীভাবে সাহায্য করে—সেই বিষয়ই উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

মূল তথ্য

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মীদের মনোবিজ্ঞান ও ওয়ার্কপ্লেস ডিজাইনে কাজ করা কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে মিলিয়ে পাঁচটি পরিবর্তনকে কার্যকর হিসেবে দেখানো হয়েছে—(১) ডেস্কে সবুজ গাছ বা প্রিয় ছবির মতো ‘পার্সোনাল টাচ’ যোগ করা, (২) ঘণ্টায় দু–তিন মিনিট হাঁটা ও জলখাবার–পানি খাওয়ার বিরতি নেওয়া, (৩) সপ্তাহে অন্তত এক দিন রঙিন বা নিজের পছন্দের পোশাক পরা, (৪) কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গে অ–কর্ম বিষয়ক হালকা আলাপ ও খাবার ভাগাভাগি, এবং (৫) প্রতিদিন ছোট ছোট শেখার লক্ষ্য স্থির করে নিজস্ব দক্ষতার অগ্রগতি চোখে দেখা।

প্রেক্ষাপট

কোভিড–পরবর্তী সময়ে হাইব্রিড বা অফিসমুখী কাজে ফেরার পর বাংলাদেশের শহুরে কর্মজীবীরা ‘ওয়ার্ক ফ্যাটিগ’ ও ‘সাইলেন্ট কুইটিং’—দু’টিকেই বড় সংকট হিসেবে দেখছেন। ২০২3 সালের একটি আইসিআইটি–বিইউইটি যৌথ সমীক্ষা বলেছে, ঢাকার ৬৭ শতাংশ কর্পোরেট কর্মী সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই কাজকে “একঘেয়ে” বলে অনুভব করেন। মনোবিজ্ঞানীরা একে ‘বোরআউট’ বলছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে হতাশা ও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সায়মা কবির রয়টার্সকে বলেন, "শ্রম বাজারে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে, ফলে অনুপ্রেরণা হারানো মানে কর্মী ও প্রতিষ্ঠান—দুই পক্ষেরই ক্ষতি। ছোট কিন্তু অর্থবহ পরিবর্তন কর্মীদের ‘কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রকের বোধ বাড়ায়, যা স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল কমাতে ভূমিকা রাখে।" meanwhile, ভিন্ন মত দিচ্ছেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজের পরিবেশ বিশ্লেষক ফারহানুল হক; তাঁর মতে, "শুধু ব্যক্তিগত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, অফিসের পলিসি ও বসের সহযোগিতাও জরুরি।"

এর গুরুত্ব কী

কর্মদক্ষতা বাড়াতে দেশে এখন টার্নওভার কমানো বড় চ্যালেঞ্জ। বিবিএ-আইবিএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আঠারো থেকে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী কর্মীদের ৪২ শতাংশই বছরে অন্তত একবার চাকরি বদলের কথা ভাবেন; প্রধান কারণ একঘেয়েমি ও মানসিক ক্লান্তি। প্রতিবেদনের পাঁচটি সরল উপায়—যেমন ডেস্কে সুকুলেন্ট রাখা বা প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়ানো—লোকসানের এ প্রবণতা রোধে কম খরচে দ্রুত ফল দিতে পারে।

কিভাবে এই পর্যন্ত এলাম

যান্ত্রিক অফিস সংস্কৃতিতে রং আনতে বিশ্বব্যাপী ‘বায়োফিলিক ডিজাইন’, ‘মুভমেন্ট ব্রেক’ ও ‘থিমড ড্রেস ডে’ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। গুগল–মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্ট ২০১৬ সাল থেকেই ডেস্ক-গাছ বাধ্যতামূলক করেছে; বাংলাদেশে তা এখনও ব্যক্তিপর্যায়ে সীমিত। সামাজিক মাধ্যমে টিকটক বা ইনস্টাগ্রাম রিলসের ‘ডেস্ক মেকওভার’ ভিডিওগুলো তরুণ কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ ছড়াচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন স্টার্টআপ এরই মধ্যে ওয়ার্কস্টেশন সাজাতে বাজেট বরাদ্দ করেছে—যেমন রিমোটপ্লাস ও পাঠাও।

পরবর্তী পদক্ষেপ

কাজের জায়গার নীতি নির্ধারকদের জন্য বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করছেন—(১) অফিসে ছোট ব্রেক আউট জোন বা মিনি কফি কর্নার করা, (২) কর্মীদের ব্যক্তিগত ডেস্ক সাজানোর জন্য বার্ষিক ক্ষুদ্র ভাতা চালু, (৩) প্রতি মাসে ‘রঙিন পোশাক’ বা ‘থিম ডে’, (৪) নিয়মিত মাইক্রো-লার্নিং সেশন, এবং (৫) আউটডোর টিম-বিল্ডিং কর্মসূচি। এগুলো চালু থাকলে ব্যক্তিগত পরিবর্তনের সুফল আরও বহুগুণে বাড়বে।

শেষ কথা

অফিসের কাজ পুরোপুরি পাল্টে ফেলা না গেলেও পরিবেশ ও মানসিকতা বদলাতে ক্ষুদ্র পদক্ষেপই যথেষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে বৈশ্বিক গবেষণা। বাংলাদেশের কর্মজীবী ও প্রতিষ্ঠান দু’পক্ষই যদি ডেস্কে সবুজ গাছ থেকে শুরু করে মাঝেমধ্যে রঙিন পোশাক—এ ধরনের সহজ উপায় গৃহীত করে, তাহলে উৎপাদনশীলতা ও মানসিক সুস্থতা একই সঙ্গে বাড়বে বলেই আশাবাদী মনোবিজ্ঞানীরা।

More From Author

হার্টের ঝুঁকি কি আসলে ডিম, নাকি চিনি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা

কলম্বোর রূপকথা: লঙ্কান মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *