শ্রীলঙ্কার মাটিতে টাইগারদের ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়
বুধবার ১৬ জুলাই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয়। ১৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই ওপেনার পারভেজ ইমন আউট হলেও তানজিদ তামিমের ৭৩ রান ও অধিনায়ক লিটন দাসের ৩২ রানে ১৬.৩ ওভারেই ম্যাচ শেষ করে টাইগাররা। এর আগে অফ-স্পিনার মাহেদী হাসান ৪ ওভারে ৪-১১ তুলে শ্রীলঙ্কাকে ১৩২/৭ রানে বেঁধে দেন। ২০১৭ সালের পর পূর্ণাঙ্গ সফরে গিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হারলেও এই জয়ে সফর শেষ পর্যন্ত উজ্জ্বল করল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, এমনকি লঙ্কান মাটিতেও, এটিই বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।
ঘটনাপ্রবাহ
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায়। শারিফুল ইসলামের প্রথম ওভারে কুশল মেন্ডিস বিদায় নিলে আক্রমণে আসেন মাহেদী হাসান। অফ-স্পিনের নিখুঁত লেন্থে তিনি কুশল পেরেরা, দীনেশ চান্দিমাল, চারিথ আসালাঙ্কা ও সেট হওয়া পাথুম নিসাঙ্কাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন। শেষদিকে দাসুন শানাকার ২৫ বলে অপরাজিত ৩৫ এবং শরিফুলের শেষ ওভারের ২২ রান ছাড়া বড় কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি লঙ্কানরা। ২০ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩২/৭।
জবাবে ইনিংসের প্রথম বলেই পারভেজ ইমন বোল্ড হয়ে গেলে চাপ বাড়ে, কিন্তু লিটন দাস ও তানজিদ তামিম ধীরস্থির রানে চাপ কাটান। পাওয়ার-প্লে শেষ হয় ৪৭/১ রানে। ১০তম ওভারে তানজিদ ২৭ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি পূর্ণ করেন। লিটন ২৬ বলে ৩২ করে আউট হলেও হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে তানজিদ ম্যাচ ও সিরিজ দুটোই নিশ্চিত করেন। ৪৭ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১ চার ও ৬ ছয়। ৩৩ বল হাতে রেখেই ১৩৩/২ করে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ।
প্রেক্ষাপট
সফরের শুরুটা ছিল হতাশার; দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে—দুটোই হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতা ও বোলিং বৈচিত্র্যের অভাব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল সর্বত্র। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি হারলে চাপ দ্বিগুণ হয়। কিন্তু পরের ম্যাচে লিটন দাসের ৭৬* ও দলে ফেরা মাহেদীর বুদ্ধিদীপ্ত ট্যাকটিকস দলকে সমতায় ফেরায়। বুধবারের ফাইনালে সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগে। রাইজিংবিডি ও দৈনিক নয়া দিগন্ত বিশ্লেষণে বলছে, বিদেশের মাটিতে প্রতিকূলতা পেরিয়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশ দলে “জীবন সঞ্চার” করবে।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• ১৩২/৭ – শ্রীলঙ্কার ইনিংস; ২০ ওভারে তাদের সর্বনিম্ন ঘরের মাঠ সিরিজ নির্ধারণী স্কোরগুলোর একটি।
• ৪-১১ – মাহেদী হাসানের ক্যারিয়ার সেরা টি-টোয়েন্টি বোলিং ফিগার (Risingbd)।
• ৭৩* – তানজিদ তামিমের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক স্কোর, পাঁচটি ছক্কার রেকর্ডও গড়েন তিনি।
• ২১ বল হাতে – বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দ্রুততম ১৩০-এর বেশি রান তাড়া (Banglatribune)।
• ১ম – শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে, বাংলাদেশের প্রথম কোনো ফরম্যাটের সিরিজ জয়।
প্রতিক্রিয়া
ম্যাচশেষে অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, “টানা হারের পর এই জয় আমাদের অনেক স্বস্তি দিল। দল দেখিয়েছে, চাপ ঝেড়ে ফেলতে পারলে আমরা পারি।” ম্যাচসেরা মাহেদী হাসান রাইজিংবিডিকে জানান, “পিচ একটু ধীর ছিল, লেন্থ ঠিক রাখাই পরিকল্পনা ছিল। নতুন বলও টার্ন করেছে, কাজে লেগেছে।” বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ছেলেদের মনোসংযোগ দেখে আমি গর্বিত। কঠিন সফরটা অন্তত সফল সমাপ্তি পেল।” সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা টাইগারদের অভিনন্দনে ভাসাচ্ছেন; সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম টুইট করেছেন, “ঐতিহাসিক, ছেলেরা শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে।”
এরপর কী
দল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরছে। ২০ জুলাই থেকে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কা সিরিজের পারফরমেন্স বিবেচনায় দলে বড় পরিবর্তন হবে না। র্যাঙ্কিংয়ে সাত থেকে ছয়ে উঠতে টাইগারদের সামনে এখন নতুন লক্ষ্য। কোচ-অধিনায়ক দু’জনই বলছেন, “এই জয়ের ধারা ধরে রাখতে হলে একই 집중 ও পেশাদারিত্ব নিয়ে মাঠে নামতে হবে।”