চট্টগ্রামে এক হাজার ড্রোনের আলোয় ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ শুরু

চট্টগ্রামে এক হাজার ড্রোনের আলোয় ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ শুরু

চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার গভীর রাতে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়েছে নজরকাড়া এক ড্রোন শো দিয়ে। রাত ১১টা ১৫-এ আকাশে উড়ে ১,০২০টি ড্রোন ২০১৩-র শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড থেকে সাম্প্রতিক গুম–নিখোঁজ পর্যন্ত নানা রাজনৈতিক স্লোগান ও প্রতীক ফুটিয়ে তোলে। কয়েক হাজার দর্শকের ভিড়ে ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকা এবং সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা মণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য। এর আগে বিকেল থেকে ‘বে অব বেঙ্গল’, ‘চিম্বুক’সহ জনপ্রিয় ব্যান্ড ও শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। জেলা প্রশাসনের এই আয়োজন ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে, যেখানে নাটক, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও মুক্ত আলোচনাসভা রয়েছে।

প্রেক্ষাপট

আয়োজকেরা ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ বলতে বোঝাচ্ছেন ২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার আন্দোলন, যাকে অনেকে শাপলা ম্যাসাকার, গুম ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে প্রথম সাংগঠনিক প্রতিবাদ বলে দেখেন। আন্দোলনে নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্ত, নূর মোস্তফা ও আবু সাঈদের মতো তরুণদের স্মরণে মাসজুড়ে অনুষ্ঠান করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। লক্ষ্য—রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস স্মরণ, একই সঙ্গে তরুণদের কাছে গণতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা।

ঘটনাপ্রবাহ

বিকেল ৪টার দিকে স্টেডিয়ামের উন্মুক্ত মঞ্চে গান শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হয় ‘জুলাই বিষাদ সিন্ধু’ ও ‘জুলাই বীরগাথা’ প্রামাণ্যচিত্র। ১০টা থেকে নিরাপত্তা পরীক্ষার পর ফাঁকা করা হয় খেলার মাঠ; ১১টা ১৫-এ ১২ মিনিটের ড্রোন শো শুরু হয়। ড্রোনগুলো একবার ‘বাংলা কি তোর বাপ-দাদার?’ লিখে, আরেকবার লাল-সবুজে বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকে আকাশ আলোকিত করে। শো শেষে উপস্থিত সবাই মোমবাতি জ্বেলে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।

প্রতিক্রিয়া

মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে শহীদ শান্তর মা কহিনুর আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “বুক ভেঙে গেছে, তবু চাই ওর খুনিদের বিচার হোক।” শহীদ ফারুকের স্ত্রী ও ওয়াসিমের বাবা একই দাবিতে কণ্ঠ মেলান। দর্শক তালিকায় থাকা শিক্ষার্থী সাগর বিশ্বাসের মত, “ড্রোন শোটা প্রযুক্তি আর ইতিহাস দুটোরই চমৎকার সংযোগ।” সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “এই স্মরণ আমাদের ভুলে না যেতে সাহায্য করবে, কিন্তু সামনে তাকাতে হবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে।”

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

ড্রোন সংখ্যা: ১,০২০; শোয়ের দৈর্ঘ্য: ১২ মিনিট; দর্শক: আনুমানিক ৮,০০০; নিরাপত্তার স্তর: ৩; অনুষ্ঠানের মোট দিন: ৩২ (৫ আগস্ট পর্যন্ত); ব্যান্ড ও একক শিল্পী: ৬; শহীদ পরিবারের প্রতিনিধির সংখ্যা: ১৭।

এরপর কী

২৬ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ২৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং ১ আগস্ট গণশুনানি ‘গুম ও নিখোঁজের গল্প’। সমাপনী দিনে ৫ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রোডম্যাপ প্রকাশ করবে জেলা প্রশাসন, যা শিক্ষাক্রমে মানবাধিকার বিষয়ক অধ্যায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করবে। আয়োজকেরা বলছেন, অংশ নিতে দর্শকদের অনলাইনে আগাম নিবন্ধন করতে হবে, তবে শহীদ পরিবারের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে।

More From Author

৫ কোটি শুল্ক ফাঁকি: চট্টগ্রামে সি অ্যান্ড এফ মালিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

গোপালগঞ্জের সহিংসতা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারকে জামায়াত আমিরের আহ্বান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *