সুইদায় চিকিৎসা বহরে ইসরায়েলি হামলা: মানবিক সহায়তা রক্ষায় উদ্বেগ বাড়ছে

সুইদায় চিকিৎসা বহরে ইসরায়েলি হামলা: মানবিক সহায়তা রক্ষায় উদ্বেগ বাড়ছে

দক্ষিণ-সিরিয়ার সুইদা শহরে যাচ্ছিল ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি ওষুধ-সরঞ্জামভর্তি একটি চিকিৎসা বহর। বুধবার ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বহরটিকে লক্ষ্য করে অন্তত দু’বার বোমা ও রকেট হামলা চালায় বলে জানান সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোসাব আল-আলি। একই দিনে ইসরায়েল লাতাকিয়া ও রাজধানী দামাস্কাস সংলগ্ন সামরিক স্থাপনাতেও আঘাত হানে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা এসওএইচআর জানায়, সুইদা প্রদেশে পৃথক হামলায় সিরিয়ার অন্তত তিন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, “দ্রুজ জনগণকে রক্ষায় ইসরায়েল ‘ব্যথাদায়ক আঘাত’ অব্যাহত রাখবে।” মানবিক সাহায্যে বাধা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

প্রেক্ষাপট

সু্ইদা অঞ্চলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী, স্থানীয় দ্রুজ মিলিশিয়া ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। ইসরায়েল বলছে, সংঘর্ষে সংখ্যালঘু দ্রুজদের ওপর আক্রমণ বেড়ে গেলে তারা ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে’ সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু সিরিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এই ব্যাখ্যাকে মানতে নারাজ; তাদের মতে, ইসরায়েল আসাদ-পরবর্তী দুর্বল সিরিয়ায় নিজেদের কৌশলগত দখল আরও পাকাপোক্ত করতে চাইছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

• ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স ও ২টি ওষুধবাহী ট্রাক ছিল বহরে

• ১০ জন বিশেষায়িত সার্জন ছিলেন বহরের সঙ্গে

• এসওএইচআর-এর হিসাবে বুধবারের হামলায় ৩ জন সামরিক কমান্ডারসহ মৃত ৪, মোট নিহত ১০ (সপ্তাহজুড়ে)

• ডিসেম্বরে আসাদ পতনের পর ৪৮ ঘণ্টায় ৪০০-এর বেশি স্থাপনায় আঘাত করেছিল ইসরায়েল

প্রতিক্রিয়া

সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আহত মানুষের কাছে পৌঁছাতে না দিয়ে চিকিৎসা বহরে হামলা স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।” ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ টুইটে লেখেন, “সতর্কবার্তা শেষ, এখন থেকে আসবে ব্যথাদায়ক আঘাত।” রাশিয়া ও ইরান উভয়ই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। দাতাসংস্থা রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এলাকায় ওষুধ, জ্বালানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে।

বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ আলি রয়টার্সকে বলেন, “ইসরায়েলি লক্ষ্য সামরিকের চেয়ে রাজনৈতিক—নতুন দমনহীন সিরিয়াকে সীমান্তে কখনও শক্ত হতে না দেওয়া।” তাঁর মতে, সুইদা-গোলান করিডরকে ‘বাফার জোন’ বানিয়ে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ঠেকানো এবং ওয়াশিংটন-মধ্যস্থ আলোচনায় দামাস্কাসকে দুর্বল অবস্থানে রাখা হলো মূল হিসাব। তবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বারবার হামলায় আঞ্চলিক ক্ষোভ বাড়ছে; এতে ইরান বা হিজবুল্লাহ পাল্টা জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এরপর কী

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর চিকিৎসা বহরের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষকে ‘তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি’ আহ্বান জানিয়েছে। সিরিয়ান সরকার সুইদা রুটে নতুন করে সামরিক কনভয় পাঠাচ্ছে; অন্যদিকে ইসরায়েল ড্রোন নজরদারি বাড়িয়েছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, মানবিক সহায়তার প্রবেশ আটকে গেলে দেড় লাখের বেশি সাধারণ নাগরিক দ্রুত খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে পড়বে।

More From Author

শ্রীলঙ্কায় ইতিহাস গড়ল লিটনের বাংলাদেশ

গাজীপুর-বিমানবন্দর বিআরটি: বাস আসতে আরও দুই বছর, ব্যয় ছুঁয়েছে ৬,২৪০ কোটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *