সহিংসতার পর ২২ ঘণ্টার কারফিউয়ে স্তব্ধ গোপালগঞ্জ

সহিংসতার পর ২২ ঘণ্টার কারফিউয়ে স্তব্ধ গোপালগঞ্জ

বুধবার (১৬ জুলাই) রাত আটটা থেকে গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে যাতায়াত নিষিদ্ধ থাকলেও ওষুধ-চিকিৎসা ও জরুরি সেবার গাড়ি চলাচলের অনুমতি আছে। কারফিউয়ের আগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত সমাবেশ ও পদযাত্রায় হামলা, পাল্টা হামলা ও গুলিতে অন্তত দুজন নিহত এবং নয়জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও চার প্লাটুন বিজিবি শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে; গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

মূল তথ্য

• কারফিউ সময় : বুধবার ১৬ জুলাই রাত ৮টা – বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা (২২ ঘণ্টা)।

• নিহত : ২; হাসপাতালে ভর্তি আহত : ৯ (সূত্র : গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল)।

• মোতায়েন : সেনা, পুলিশ, র‍্যাব ও চার প্লাটুন বিজিবি (বিজিবি জনসংযোগ)।

• নিয়ম : জরুরি প্রয়োজনে পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ।

• লক্ষ্য : “আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করা” – জেলা প্রশাসন।

ঘটনাপ্রবাহ

দুপুর ১টা ৩০ : পৌর পার্কের মঞ্চে এনসিপি সমাবেশ শুরুর আগে লাঠিসোঁটা-সহ একদল যুবক হামলা চালায়।

দুপুর ২টা : পুলিশ পাশের আদালত প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেয়; সমাবেশ ক্ষণস্থায়ীভাবে স্থগিত।

দুপুর ২টা ৫ মিনিট : কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেন ভাষণ শেষ করেন।

বিকেল ২টা ৫০ : লঞ্চঘাট এলাকায় এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে ব্যাপক হামলা, গুলিবর্ষণ; শহরজুড়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

বিকেল ৪টা : ১৪৪ ধারা জারি।

সন্ধ্যা ৬টা : বিজিবি যোগ দেয়; টহল বাড়ে।

রাত ৮টা : কারফিউ কার্যকর।

প্রেক্ষাপট

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপি চলতি মাসে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী ছাত্রলীগের কার্যক্রম সরকারি গেজেটে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তাঁদের নেতাকর্মীরা ‘হামলায় জড়িত’ বলে এনসিপির অভিযোগ। পুলিশ আগেই উত্তেজনার শঙ্কায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করলেও সংঘর্ষ ঠেকাতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের আগে নতুন দলগুলোর প্রকাশ্য কর্মসূচি থামিয়ে দিতে স্থানীয় শক্তিগুলো সক্রিয় হচ্ছে, যার মধ্যে গোপালগঞ্জের ঘটনাও পড়ে।

প্রতিক্রিয়া

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে থাকুন।” জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রাণহানি এড়াতে কারফিউ ছাড়া বিকল্প ছিল না। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পুলিশ-সেনা উপস্থিতিতে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।” আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “এনসিপির ভেতরের কোন্দল থেকেই গোলাগুলির সূচনা।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকুতি জানিয়ে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন লিখেছেন, “সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।”

এরপর কী

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারফিউ প্রত্যাহারের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে দাফন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে প্রশাসন ও পরিবারগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুলিশ হামলায় জড়িত সন্দেহে রাতেই ১২ জনকে আটক করেছে; সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকায় জরুরি বৈঠক ডেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, দ্রুত বিচার ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস না এলে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

More From Author

আফগান পুনর্বাসন তথ্য ফাঁস: ব্রিটেনে অস্থিরতার আশঙ্কা, সরকারের জরুরি ব্যবস্থা

গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে হামলা, নিহত ৩: নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রশ্নে তীব্র বিতর্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *