যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% পাল্টা শুল্ক নিয়ে ঢাকার নীরবতা, অনিশ্চয়তায় রপ্তানি খাত
বুধবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে আলোচনা চলছে এবং আলোচনার মধ্যেই মন্তব্য করে সরকার ‘অস্বস্তিকর পরিস্থিতি’ তৈরি করতে চায় না। একই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ বিষয়ে ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ (গোপনীয়তার চুক্তি) হয়েছে, ফলে আলোচনার খুঁটিনাটি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হলে পোশাকসহ বাংলাদেশের দেড় শতাধিক পণ্যের মার্কিন বাজার ঝুঁকিতে পড়বে।
প্রেক্ষাপট
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর কয়েকটি পণ্যে তিনি ‘পাল্টা শুল্ক’ বসাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, এসব দেশ ডলার অনুকূল বিনিময় হার ও ভর্তুকির সুযোগ নিয়ে মার্কিন শিল্পকে ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতায়’ ফেলছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বাড়বে, যার মধ্যে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির 17 শতাংশ পণ্য তালিকাভুক্ত।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• ৩৫%: ঘোষিত সর্বোচ্চ শুল্কহার ।
• ৯.৭ বিলিয়ন ডলার: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মার্কিন রপ্তানি আয় (বিজেআইএম ডেটা)।
• ৪.২ মিলিয়ন: তৈরি পোশাক শিল্পে সরাসরি শ্রমিক সংখ্যা, যার ৭৪% নারী।
• ১ আগস্ট: শুল্ক কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ।
প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে অর্ডার বাতিল ও কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়বে।” ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের শামসুল আলম মনে করেন, শ্রমিকদের জন্য ‘জুলাই শেষ হলে আগস্টে ছাঁটাই’ বাস্তব হতে পারে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস এক ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছে, “উভয় দেশই আলোচনায় আশাবাদী এবং শেখানো শর্ত পূরণে আন্তরিক।”
ব্যবসায় প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক আরোপ থাকলে ঢাকার সবচেয়ে বড় বাজারে পোশাকের গড় দর ৩–৪ ডলার বাড়বে, যা ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলো অন্য দেশমুখী করতে পারে। চামড়া, চিকন তাপসিল্ক ও কডিও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যও তালিকায় আছে। “যদি দ্রুত সমাধান না আসে, রপ্তানি বৈচিত্র্যহীনতার দৈন্য ফের চোখে আঙুল দেবে,”— মন্তব্য ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাদিক আহমেদের।
বিশ্লেষণ
ঢাকার নীরবতা কৌশলগত কি না—এ নিয়ে মতভেদ আছে। কোনো পক্ষ বলছে, গোপনীয়তা চুক্তি থাকায় উচ্চাভিলাষী মন্তব্য এড়ানো হচ্ছে; কেউ কেউ মনে করেন, সমঝোতার ‘মূল্য’ হিসেবে ওয়াশিংটন ভোটাধিকার বা শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাড়তি চাপ বাড়াতে পারে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রই জিএসপি সুবিধা স্থগিত রেখেছে ২০১৩ সাল থেকে। ফলে শুল্ক ইস্যুতে ছাড় আদায়ে ঢাকার ‘ব.argaining chip’ সীমিত।
এরপর কী
পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ দল আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সেখানে মূল্য সংযোজনের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানো, ধাপে ধাপে শুল্ক কমানো ও ‘ওয়ান-ইয়ার রিভিউ ক্লজ’ যুক্ত করার প্রস্তাব যাবে। যদি চুক্তি না হয়, তাহলে সরকার রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ৪% থেকে ৬%–এ বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘ক্যাশ ইনসেনটিভ’ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিপদ কাটানো যাবে না; ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার খুঁজতে ও পণ্য বৈচিত্র্য বাড়াতে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।