চান্দিনায় সাবেক মেয়র মফিজুল ইসলাম গ্রেপ্তার, ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত

চান্দিনায় সাবেক মেয়র মফিজুল ইসলাম গ্রেপ্তার, ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি নেতা মো. মফিজুল ইসলামকে (৫৫) ১৫ জুলাই রাত ৮টা ১৫ মিনিটে নিজ বাড়ি মহারং পশ্চিম পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে থানাপুলিশ। ওসি জাবেদ উল ইসলামের ভাষ্য, ২০২4 সালের জুলাই-আগস্টের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ চলাকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। মফিজ ২০১৬-২১ সাল পর্যন্ত নৌকা প্রতীকে চান্দিনার মেয়র ছিলেন এবং ১৯৯৯ সাল থেকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। গ্রেপ্তারের রাতেই তাঁকে আদালতে হাজির করতে কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।

প্রেক্ষাপট

গত বছরের জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার ও আঞ্চলিক নানা বৈষম্য ঘিরে রাজধানীতে উত্তপ্ত ছাত্র বিক্ষোভে দু’টি সহিংস ঘটনা ঘটে, যাতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। তখন যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা থানায় আলাদা হত্যা মামলাগুলোর একটি করে তদন্তে মফিজুল ইসলামের নাম উঠে আসে বলে পুলিশ জানিয়েছে। চান্দিনায় তাঁর বিরুদ্ধেও চাঁদা দাবি ও হামলার দুটি অভিযোগ আগে থেকেই বিচারাধীন। ১৯৮৬-তে ছাত্রলীগে যুক্ত হওয়া মফিজুল স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী; মেয়র থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গে দলের ভেতর কোন্দল বেড়ে যায়, বিশেষ করে টেন্ডার ও উন্নয়ন প্রকল্প বণ্টন নিয়ে।

প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের কুমিল্লা উত্তর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, “আইন তাঁর নিজস্ব পথে চলুক, দলীয় পরিচয় দিয়ে অপরাধ আড়াল করা সমীচীন নয়।” অন্যদিকে পৌর আওয়ামী লীগের একাংশ অভিযোগ করছে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মফিজ ‘বলির পাঁঠা’। সামাজিক মাধ্যমে বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তারের ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রতিক ‘বিপক্ষ মত দমনের’ অভিযোগকে যুক্ত করেছেন, উল্লেখ করেছেন গাজীপুরের বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ঢাকায় হত্যা মামলা দায়েরের উদাহরণ।

বিশ্লেষণ

গত কয়েক সপ্তাহে দলীয় পরিচয়ধারী রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার ধারাবাহিকতা চোখে পড়ছে। বাগেরহাটে সাবেক সরকারি দলের এমপির এপিএসের দুই কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক, ঢাকায় সাবেক ওসি ইকরাম আলীর ৫ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, আবার বিএনপির নেতা-শিক্ষক হারুনকে হত্যা মামলায় আসামি—সব মিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। ট্রেন্ডটি ‘আইনগত শুদ্ধি অভিযান’ না ‘রাজনৈতিক টার্গেটিং’—তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভক্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞানী ড. তানভীর সিদ্দিক বলেন, “একই সময়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী—দুই শিবিরের নেতারা আটক হওয়া নমুনা-নিরপেক্ষতা দেখালেও, তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার গতি-মানদণ্ডই নিরপেক্ষতার আসল পরীক্ষা।”

এরপর কী

মফিজুল ইসলামের রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে বুধবার শুনানি হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হবেন। চান্দিনা পৌরসভায় এখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটি টানা তৃতীয় দিনের মতো জরুরি বৈঠক ডেকেছে যাতে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো স্থবির না হয়। পুলিশ বলছে, ঢাকার মামলার তদন্তদলকে সহযোগিতা করতে তাঁরা নথি ও সিসিটিভি ফুটেজ পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে, দলীয় পদে পরিবর্তন আনার আগেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ‘প্রথমে বিচার, পরে সিদ্ধান্ত’ নীতি নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

• ২: ঢাকার থানায় মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে থাকা হত্যা মামলা সংখ্যা।

• ৪: চান্দিনা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে চলমান অন্যান্য ফৌজদারি মামলার সংখ্যা (চাঁদাবাজি, হামলা, সরকারি সম্পত্তি ক্ষতি ইত্যাদি)।

• ৫৫: গ্রেপ্তারের সময় তাঁর বয়স।

• ৫: বছর তিনি চান্দিনার মেয়র ছিলেন (২০১৬-২১)।

শেষ কথা

চান্দিনার আলোচিত এই গ্রেপ্তার রাজনীতির মাঠে আরেকটি বার্তা ছড়িয়েছে—দলীয় পরিচয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু মামলার ফল দ্রুত ও স্বচ্ছ না হলে, এটিকে ক্ষমতার ভেতরের বা বাইরের গ্রুপের ‘ক্যালকুলেটেড মেসেজ’ হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়বে, যা আইনের মর্যাদাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

More From Author

গ্যাস না থাকায় ৯৬ দিন বন্ধ চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা, ক্ষতি ছুঁয়েছে ৫০০ কোটি

আতলেতিকো মাদ্রিদে থিয়াগো আলমাদা: আরও এক বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইনের আগমন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *