অ্যামহার্স্টে এমিলি ডিকিনসন মিউজিয়াম: নিভৃত কবির অদেখা দুনিয়া
মার্কিন কবি এমিলি ডিকিনসনের (১৮৩০‒১৮৮৬) স্মৃতি ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের অ্যামহার্স্ট শহরে গড়ে তোলা হয়েছে দু’টি ঐতিহাসিক বাড়ি নিয়ে এমিলি ডিকিনসন মিউজিয়াম। ‘হোমস্টেড’ ও ‘এভারগ্রিনস’ নামে পরিচিত এ আবাস দুটির ভেতরেই সংরক্ষিত আছে কবির লেখা, পোশাক, ঘরদোর ও পারিবারিক নিদর্শন। সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক ও ভ্রমণকারী প্রথম আলোকে জানান, মিউজিয়ামকে ঘিরে নতুন বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গ্রীষ্ম মৌসুমে। দর্শনার্থীরা এখন এমিলির ব্যবহৃত ছাপা সাদা পোশাক, তার ছোট লেখার ডেস্ক এবং শয্যাশায়ী মায়ের ঘর কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছেন।
পটভূমি
এমিলি ডিকিনসন উনবিংশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী ইংরেজি ভাষার কবি, যিনি জীবদ্দশায় মাত্র একটি কবিতা প্রকাশিত করলেও মৃত্যুর পর তার প্রায় ১,৮০০ কবিতা বিশ্বসাহিত্যে আলোড়ন তোলে। তিনি আমৃত্যু অ্যামহার্স্টেই বাস করেন এবং স্বেচ্ছা অন্তরীত জীবন কাটান। কবির পারিবারিক বাড়ি ‘হোমস্টেড’ এবং ভাই অস্টিন ও ভাবি সুজানের বাড়ি ‘এভারগ্রিনস’ ২০০৩ সালে একীভূত করে মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়। বছরজুড়ে এখানে পাঠ ও গবেষণা কর্মশালার পাশাপাশি কবির জন্মদিন (১০ ডিসেম্বর) উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মূল তথ্য
• অবস্থান: ২৮১ মেইন স্ট্রিট, অ্যামহার্স্ট, ম্যাসাচুসেটস।
• স্থাপনা: ১৭৯৪ সালের মূল কাঠের গঠন, পরে ১৮৫৫ ও ১৮৮০–এর পুনর্গঠন।
• গ্যালারি: আটটি কক্ষ, পাঁচটি স্থায়ী প্রদর্শনী।
• প্রবেশ ফি: প্রাপ্তবয়স্ক ১৬ ডলার, শিক্ষার্থী ১৩ ডলার; অনলাইনে আগাম টিকিট বাধ্যতামূলক।
• খোলা থাকে: বুধবার‒সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি)।
ঘটনাপ্রবাহ
পোস্ট–প্যানডেমিক সংস্কারকাজ শেষে ২০২۲ সালে ‘এভারগ্রিনস’ দ্বিতীয় দফা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর দ্য হিউম্যানিটিজের অনুদানে টিকটিকির ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ মেরামত, অ্যান্টিক আসবাবের রেস্টোরেশন এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বসানো হয়। অগস্ট ২০২৪ থেকে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ‘Emily and the Garden’ শিরোনামে নতুন প্রদর্শনী শুরু করেছে, যেখানে এমিলির বাগান থেকে সংগৃহীত ফুল-গাছের চিত্র ও কবিতার পাণ্ডুলিপি একসঙ্গে দেখানো হচ্ছে।
বিশ্লেষণ
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখক ইঙ্গিত করেছেন, অন্তরঙ্গ জীবন, প্রায় একক কণ্ঠে বাংলা ও বিশ্বসংস্কৃতিকে ধারণ—এই দিক থেকে এমিলি ডিকিনসন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে সূক্ষ্ম মিল আছে। উভয়েই ঘর থেকে বিশ্বভুবনে পৌঁছেছেন। আন্তর্জাতিক এমিলি ডিকিনসন সোসাইটির গবেষক ক্যারেন স্যান্টোস বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথের মতোই এমিলি স্থানিক সীমা ভেঙে মানবমনের普ার্থনা ও প্রকৃতির সঙ্গে কথোপকথন রচনা করেছেন।’ বাংলা পাঠকদের জন্য এই মিউজিয়াম হতে পারে দুই কবির কাব্য–সংলাপের এক জীবন্ত পাঠশালা।
এর গুরুত্ব কী
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে বা ভ্রমণে আগ্রহী অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জন্য অ্যামহার্স্ট একটি পরিচিত নাম, কারণ এখানেই রয়েছে অখ্যাত হলেও সমৃদ্ধ আমহাস্ট কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস। মিউজিয়ামটি তাদের জন্য সাহিত্যের বাইরে এক অন্তরঙ্গ মানবিক অভিজ্ঞতা যোগ করে। মিউজিয়াম ট্রাস্টের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৪৬টি দেশের ৩২ হাজার দর্শনার্থীর ৭ শতাংশই ছিলেন দক্ষিণ এশীয়। বাংলা ভাষায় অডিও গাইড চালু করার চিন্তাও চলছে।
এরপর কী
২০২৫ সালের বসন্তে ‘Emily Meets Asia’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে জাপানি ও বাংলা অনুবাদে প্রকাশিত ডিকিনসনের নির্বাচিত কবিতার প্রথম সংস্করণ প্রদর্শিত হবে। অনুষ্ঠিত হবে অনলাইন সেমিনার, যাতে বাংলাদেশ থেকে গবেষক ও তরুণ কবিরা অংশ নিতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।
শেষ কথা
নদীর ওপাড়ে বসে এমিলি ডিকিনসন যে নিস্তব্ধতায় ‘Hope is the thing with feathers’ লিখেছিলেন, সেই নিস্তব্ধতাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য ভিসা বা দূরত্ব বড় বাধা নয়—প্রয়োজন শুধু কৌতূহল আর কিছুটা প্রস্তুতি। অ্যামহার্স্টের এই মিউজিয়াম বাংলা পাঠকদের জন্য তাই শুধু এক কবির বাড়ি নয়, আত্মবিশ্লেষণের এক ঠিকানা হতে পারে।