বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ায় মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালু
মালয়েশিয়ার সরকার এখন থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (মিইভি) দেবে। ১৫ জুলাই কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নোটিফিকেশন অনুযায়ী, যাদের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ও টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট পাস (পিএলকেএস) আছে, তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে না; পাস নবায়নের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিইভি ইস্যু হবে। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, যাদের মধ্যে অনেকেই বছরের পর বছর দেশে ফিরতে পারতেন না। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশ–বিদেশ যাতায়াতে বাধা কমবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
প্রেক্ষাপট
মালয়েশিয়া ১৫টি দেশ থেকে শ্রমিক নিলেও এত দিন শুধু বাংলাদেশিদের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা দিত। ফলে কর্মীরা জরুরি প্রয়োজনে দেশে এলেও পুনরায় মালয়েশিয়ায় ঢুকতে আলাদা অনুমতির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতেন। মে মাসে ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বৈষম্যমূলক এই নীতি তুলে ধরে। এর ফলেই ১০ জুলাই ইমিগ্রেশন বিভাগ নতুন নির্দেশনা জারি করে, যা ১৫ জুলাই জনসমক্ষে আসে।
এর গুরুত্ব কী
মাল্টিপল ভিসা পাওয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা ছুটি, পারিবারিক জরুরি কাজ বা চিকিৎসার জন্য সহজে দেশে আসা–যাওয়া করতে পারবেন। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকি কমবে, আবার নিয়োগকর্তারা স্থায়ী ও অভিজ্ঞ জনবল ধরে রাখতে পারবেন। বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স জোগান বাড়ানো, শ্রমিক-কল্যাণ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এটি বড় স্বস্তি।
প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কুয়ালালামপুরের ‘বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ বলেছে, ‘সিঙ্গেল ভিসা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ; অবশেষে তা দূর হলো।’ ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা আশা করছে, নতুন সুবিধায় নিয়োগচুক্তি নবায়ন বেড়ে যাবে। তবে তারা সতর্ক করেছে, ‘ভিসা প্রক্রিয়ায় দালাল ও অতিরিক্ত ফি যেন না বাড়ে, সরকারকে তা নজরদারিতে রাখতে হবে।’
বিশ্লেষণ
দৈনিক জনকণ্ঠের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত দুই বছরে ২৫টি শ্রমবাজারের সংখ্যা নেমে এসেছে ১৬টিতে। মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় গন্তব্য হলেও দুর্নীতি ও ‘সিন্ডিকেট’ ইস্যুতে ২০২৩ সালের মে থেকে নতুন কর্মী নেওয়া প্রায় বন্ধ ছিল। ভিসা নীতির শিথিলতা শ্রমবাজার স্বাভাবিক করার পথে প্রথম পদক্ষেপ বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে টেকসই লাভ পেতে হলে প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানো, নিয়োগ খরচ কমানো এবং দু’দেশের মধ্যে স্বচ্ছ ই-ভিসা প্ল্যাটফর্ম চালু করা জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক: প্রায় ৫,০০,০০০
• ২০২২-২৩ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন: ৪,৯৪,১৮০ জন (বিএমইটি)
• সিঙ্গেল থেকে মাল্টিপল ভিসায় রূপান্তরের তারিখ: ১০ জুলাই ২০২৪
• অনুমানিত বাড়তি রেমিট্যান্স সুবিধাভোগী পরিবার: ৩ লাখের বেশি
পরবর্তী পদক্ষেপ
বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের জন্য হটলাইন ও অনলাইন নির্দেশিকা চালু করছে, যাতে পুরোনো পাসপোর্টে থাকা সিঙ্গেল ভিসার পরিবর্তে ‘মিইভি সিল’ যুক্ত করা যায়। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা সংক্রান্ত সব সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি দালাল রোধে বিমানবন্দরে ‘ওয়ান-স্টপ কেয়ার ডেস্ক’ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।