ক্যালিফোর্নিয়ার ফুটপাথে ‘মানুষের চামড়া’সদৃশ টেডি বিয়ার, তদন্তে বের হলো শিল্পকলা

ক্যালিফোর্নিয়ার ফুটপাথে ‘মানুষের চামড়া’সদৃশ টেডি বিয়ার, তদন্তে বের হলো শিল্পকলা

গত রোববার (১৩ জুলাই) ক্যালিফোর্নিয়ার ভিক্টরভিলের বিয়ার ভ্যালি রোডের এক গ্যাস স্টেশনের পাশে পড়ে থাকা একটি টেডি বিয়ার দেখে আঁতকে ওঠেন পথচারীরা। টেডি বিয়ারটির শরীরজুড়ে সেলাইয়ের দাগ, গর্তে ভরা চোখ ও টানা চামড়া দেখতে মানুষের ত্বকের মতো লাগছিল। ঘটনাস্থলে এসে স্যান বের্নার্ডিনো কাউন্টি শেরিফ দপ্তর খেলনাটি জব্দ করে ফরেনসিক পরীক্ষা শুরু করে। দুই ঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষাগারে নিশ্চিত করা হয়—ঐ ‘ত্বক’ আসলে নরম ল্যাটেক্স, আদৌ মানব টিস্যু নয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বীকার করেন দক্ষিণ ক্যারোলিনার শিল্পী রবার্ট কেলি—এটি তাঁর তৈরি “Skin Teddy”, যা Etsy প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার এক ক্রেতার ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছিল।

পটভূমি

ডেইলি জনকণ্ঠ ও স্থানীয় টিভি চ্যানেল KABC-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকালে বাসের জন্য অপেক্ষা করা কয়েকজন প্রথম খেলনাটি দেখতে পান। তারা ৯১১-এ ফোন করলে শেরিফ অফিস এলাকা ঘিরে ফেলে। কারণ প্রথম দর্শনে মনে হচ্ছিল, কারও দেহচর্ম ছাটাই করে খেলনা বানানো হয়েছে। খেলনাটির ভেতর থেকে কোনও জৈব উপাদান, রক্ত বা আঁশ মেলেনি; বরং পাওয়া যায় সিনথেটিক ল্যাটেক্স, ফোম ও তুলা। মার্কিন ডাক বিভাগের একটি পার্সেল স্টিকারও উদ্ধার করা হয়, যা থেকে জানা যায় প্যাকেটটি মাঝপথে হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গেছে।

প্রতিক্রিয়া

খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ও কৌতূহল—দুটিই বাড়ে। টিকটকে মাত্র এক দিনে #SkinTeddy হ্যাশট্যাগে ১৮ লাখ ভিউ জমা হয়। ভিক্টরভিলের এক বাসিন্দা সারা ভাসকেজ বলেন, “আজকাল এমন সব কাণ্ড ঘটে যে সত্যি-মিথ্যা বোঝা দায়।” অন্যদিকে পুলিশ দ্রুত স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ায় লোকজন স্বস্তি পেয়েছে। দোকানদার ম্যানুয়েল গার্সিয়া জানান, “সকাল ১০টার মধ্যেই ফুটপাত আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়, তবে দুপুর পর্যন্ত মানুষ ছবি তুলেছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক অধ্যাপক ড. লিন্ডা ঝাং ডেইলি জনকণ্ঠকে বলেন, “সিনেমা বা গেম থেকে প্রভাবিত হয়ে হাইপাররিয়েলিস্টিক শিল্পের ঝোঁক বাড়ছে। তবে জনসম্মুখে এমন বস্তু পড়ে থাকলে পুলিশকে পুরো অপারেশন চালাতে হয়, যা সময় ও অর্থ—দুটিরই অপচয়।” আর্ট ক্রিটিক জেসিকা পার্কারের মত, “রবার্ট কেলির কাজ শক ভ্যালু পদ্ধতির ধারাবাহিকতা। শিল্পীর স্বাধীনতা আছে, তবে প্যাকেজিংয়ে দৃশ্যত সতর্কবার্তা থাকা উচিত ছিল।”

এরপর কী

শেরিফ দপ্তর ঘটনার ফাইল ‘ভুয়া বিপদ সংকেত’ হিসেবে বন্ধ করেছে; কোনও ফৌজদারি অভিযোগ আনা হচ্ছে না। তবে তারা ডাক বিভাগকে পাঠানো প্রতিবেদনে খেলনার গায়ে “বিষয়বস্তু ভয়াবহ হতে পারে” ধরনের লেবেল সাঁটানোর সুপারিশ করেছে। রবার্ট কেলি ইতোমধ্যে তাঁর ই-কমার্স পেজে নতুন নোটিস দিয়েছেন—কুরিয়ারে পাঠানোর সময় বাক্সে বড় করে “প্রপ আর্ট পিস” লেখা থাকবে। শিল্পীর মতে, “এত publicity-র পর অর্ডারের চাপ দ্বিগুণ হয়েছে।” স্থানীয় কর্তৃপক্ষও মানুষকে অযথা গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছে—“অদ্ভুত কিছু দেখলেই ৯১১ ডাকা ঠিক, তবে নিশ্চিত তথ্য না পেয়ে সামাজিক মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াবেন না।”

More From Author

দৈবচয়নে ১৫,৪৯৪ রিটার্ন অডিটে, ১ কোটি ফাঁকিদার ধরতে নড়েচড়ে বসেছে এনবিআর

সংসদ ভবনের দিকে লংমার্চের ঘোষণা দিল এনসিপি, ৩ আগস্টে ঢাকায় মহাসমাবেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *