দৈবচয়নে ১৫,৪৯৪ রিটার্ন অডিটে, ১ কোটি ফাঁকিদার ধরতে নড়েচড়ে বসেছে এনবিআর

দৈবচয়নে ১৫,৪৯৪ রিটার্ন অডিটে, ১ কোটি ফাঁকিদার ধরতে নড়েচড়ে বসেছে এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ২০২৩-২৪ করবর্ষে সমগ্র দেশের ১৫,৪৯৪টি আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য বাছাই করেছে। ১৬ জুলাই রাজধানীতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, ডিজিটাল ‘র‍্যান্ডম সিলেকশন’ পদ্ধতিতে প্রত্যেক কর অঞ্চলের মাত্র ০.৫ শতাংশ রিটার্ন তোলা হয়েছে এবং আগের দুই বছরে যাঁরা অডিটে পড়েছেন তাঁদের এবার বাদ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন—৭২ লাখ টিআইএনধারী যাঁরা রিটার্নই দেন না এবং ৩০ লাখ যাঁরা রিটার্ন দিয়েও কর দেন না, এই মোট ১ কোটি ব্যক্তিকে কর জালের আওতায় আনতে।

মূল তথ্য

র‍্যান্ডম নির্বাচন সম্পূর্ণ সফটওয়্যারে চালানো হয়; এতে মানবিক পক্ষপাত কমবে বলে বোর্ড দাবি করছে। অডিটে ডাকা হলে করদাতাকে ২১ দিনের মধ্যে চাহিদা-সংক্রান্ত নথি দিতে হবে। অনলাইনে জমা দেওয়া রিটার্নের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই করা হবে, আর অফলাইন রিটার্নের তথ্য দ্রুতই কেন্দ্রীয় ডেটাবেইসে যুক্ত করার কাজ চলছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

• নির্বাচিত রিটার্ন ১৫,৪৯৪

• প্রতিটি সার্কেলে বাছাই ০.৫% রিটার্ন

• মোট টিআইএনধারী ফাঁকিদার ১ কোটি

– রিটার্ন না দেওয়া ৭২ লাখ

– রিটার্ন দিলেও কর না দেওয়া ৩০ লাখ

• ২০২৫-২৬ অর্থবছর নাগাদ এই ১ কোটি করদাতাই হবে প্রধান টার্গেট

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত এখনো ৮-৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের তুলনায় অনেক কম। এনবিআর কয়েক বছর ধরে ‘রিস্ক-ভিত্তিক অডিট’ চালুর কথা বললেও কাগুজে রিটার্নের ডিজিটাইজেশন শেষ না হওয়ায় তারা আপাতত দৈবচয়নেই নির্ভর করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

পুলিশি ধরপাকড় নয়, বরং তথ্যভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনাই আধুনিক ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পথ—বলেন কর বিশেষজ্ঞ মো. সাইফুজ্জামান। তাঁর মত, ‘সঠিক অডিট হলে রাজস্ব বাড়বে, কর আতঙ্ক নয়।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষক তানভীর মাহমুদ মনে করেন, ‘বারবার একই করদাতাকে অডিটে না ডেকে নতুন নতুন ফাঁকিদার ধরার ঘোষণা স্বচ্ছতার দিকেই ইঙ্গিত করে।’

পরবর্তী পদক্ষেপ

এনবিআর সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে সব পেপার রিটার্ন স্ক্যান ও ডেটাবেইসে আপলোড করা শেষ হবে। এরপর ২০২৫ করবর্ষ থেকে ঝুঁকি-নির্ভর স্বয়ংক্রিয় অডিট চালু এবং করদাতা পোর্টালে অডিট অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ সুবিধা যুক্ত করা হবে।

বৃহত্তর চিত্র

রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে সরকার ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক থেকে নির্ভরতা কমিয়ে সরাসরি আয়করের অংশ ৪০ শতাংশে তুলতে চায়। তবে ঘাটতি শুধু কাঙ্ক্ষিত করদাতার বাইরে নয়; নীতি-সহজীকরণ, হয়রানি কমানো ও সেবার মান বাড়ানো না গেলে লক্ষ্যমাত্রা ধরা থাকবে কাগুজেই, বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদ হিদায়েতুল ইসলাম।

More From Author

সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আসতে পারে আইফোন ১৭ সিরিজ

ক্যালিফোর্নিয়ার ফুটপাথে ‘মানুষের চামড়া’সদৃশ টেডি বিয়ার, তদন্তে বের হলো শিল্পকলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *