৫ কোটি শুল্ক ফাঁকি: চট্টগ্রামে সি অ্যান্ড এফ মালিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
চট্টগ্রামের জুবলী রোড-ভিত্তিক সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট ‘এইচ কে ইন্টারন্যাশনাল’-এর মালিক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। অভিযোগ—তিনি বিল অব এন্ট্রিতে বিএমডব্লিউ গাড়ি দেখিয়ে আসলে টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানি করেন এবং জাল কাগজের মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেন। গতকাল (মঙ্গলবার) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১–এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন নিজ দপ্তরে মামলাটি দায়ের করেন।
মূল তথ্য
মামলার এজাহার অনুযায়ী, কামরুল হাসানের মালিকানাধীন ‘মেসার্স এইচ কে ইন্টারন্যাশনাল’ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিলকৃত বিল অব এন্ট্রি-তে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি দেখিয়ে আসলে ২,৭০০ সিসি-র টয়োটা প্রাডো জিপ আমদানি করে। পরে পণ্য পরিচিতি ও শুল্কহার গোপন করে ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়। এ জন্য জাল ইনভয়েস, মেনিফেস্ট ও শিপিং ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে দুদক জানায়।
কিভাবে এই পর্যন্ত এলাম
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নিয়মিত স্ক্যানিংয়ে গাড়ির মডেল নিয়ে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। বিষয়টি দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নজরে আসলে তারা গত তিন মাস তদন্ত চালায়। শুল্ক ফাইল, পণ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন ও ব্যাংক এলসি যাচাই করে দেখা যায়, ঘোষিত বিএমডব্লিউ-এর বাজারমূল্য ও শুল্কদর উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখানো হয়েছে। পরিশেষে প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যাপ্ত মনে করে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা রুজু করে।
প্রতিক্রিয়া
দুদকের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, "প্রমাণিত হলে এটি শুধু শুল্ক ফাঁকি নয়, দণ্ডবিধি অনুসারে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার গুরুতর অপরাধ। তদন্তে অন্য কোনো কর্মকর্তা বা আমদানিকারক জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তবে অভিযুক্ত কামরুল হাসান গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য দেননি এবং তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এর গুরুত্ব কী
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার ৮০০% পর্যন্ত যায়। একটি মাত্র গাড়িতে ৫ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা রাজস্ব প্রশাসনের নজরদারিতে বড় ধসের ইঙ্গিত দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গাড়ি আমদানি থেকে ৭,৬০০ কোটি টাকা শুল্ক আদায় হয়েছে; যেকোনো ফাঁকি সরাসরি সরকারি আয়ের ক্ষতি এবং বাজারে মূল্যবিকৃতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরবর্তী পদক্ষেপ
দুদক এখন সাক্ষী-সাবুদ নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করবে। প্রয়োজন হলে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যাংক ও পরিবহন কোম্পানির নথি জব্দ করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ১৬(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি কাস্টমস আইন অনুযায়ী জরিমানাও হতে পারে, যা ফাঁকিকৃত রাজস্বের দ্বিগুণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।