হিমালয়ের পর্যটন হটস্পটে ডিম ৬০০ রুপি, ঘরে ভাড়া মাত্র ১ হাজার!
উচ্চ-হিমালয়ের একটি দুর্গম পর্যটন এলাকায় এক ভ্রমণকারীর সামনে অদ্ভুত এক দামে পড়তে হয়—হোটেল কক্ষে রাতের ভাড়া ১ হাজার রুপি, কিন্তু মাত্র দুটো সেদ্ধ ডিমের বিল ৬০০ রুপি! ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হতেই শুরু হয় বিতর্ক। পর্যটকেরা বলছেন, এমন ‘অসম’ মূল্য পর্যটন–নির্ভর অর্থনীতিতে অস্বস্তি তৈরি করে; হোটেল মালিকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, জ্বালানি ও পণ্য আনার বাড়তি খরচেই দাম আকাশছোঁয়া।
মূল ঘটনার সূত্র ধরে পাহাড়ি অঞ্চলে মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহ সমস্যাসহ টেকসই পর্যটনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
প্রেক্ষাপট
ব্যক্তিগত ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ছবিতে দেখা যায়, ভারত–চীন সীমান্তঘেঁষা এক জনপ্রিয় হিল স্টেশনের ‘ক্যাম্পিং কটেজ’-এ এক রাতের ভাড়া ১ হাজার রুপি, কিন্তু খাবারের বিল তালিকায় দুটো সেদ্ধ ডিমের দাম ৬০০ রুপি লেখা। পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ১০–১২ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে খাবার, গ্যাস সিলিন্ডার ও আনুষঙ্গিক পণ্য পৌঁছাতে হয়; এই খরচই দাম বাড়িয়ে দেয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা: প্রায় ১২–১৩ হাজার ফুট
• জ্বালানি পরিবহণ খরচ: সমতলের চেয়ে গড়ে ৪০–৬০ % বেশি (স্থানীয় পর্যটন দপ্তরের হিসাব)
• পর্যটন মৌসুমে দৈনিক পর্যটক: গড়ে ৮–১০ হাজার
• সোমবার পোস্ট হওয়া ‘ডিম–কাণ্ড’ ছবিটি ২৪ ঘন্টায় ১.২ লাখ শেয়ার
প্রতিক্রিয়া
• পর্যটক দিব্যেন্দু সরকার ফেসবুকে লিখেছেন, “রুম ভাড়া ১ হাজার, অথচ নুন ছাড়া ডিম ৩শ করে—ব্যাপারটা মেনে নেওয়া কঠিন।”
• স্থানীয় হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাসি ভুটিয়া রয়টার্সকে বলেন, “পাহাড়ে খাদ্য আনতে ট্রাক ভাড়া, টোল ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি যোগ হয়। ডিমের প্রকৃত ক্রয়দর ১০ রুপি হলেও গ্যাস, পরিবহন ও লস সামলে ২৫০–৩০০ রুপি ছাড়া লাভ থাকে না।”
• রাজ্য পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘অতিরিক্ত মূল্য আদায়’ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যটন ও আতিথেয়তা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান মনে করেন, “উচ্চপাহাড়ি এলাকায় পণ্যে ভর্তুকি না দিলে কিছু অতিমূল্য স্বাভাবিক; তবে দাম ও সেবার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাই টেকসই পর্যটনের শর্ত।”
ভারতের ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের গবেষক ইনদ্রজিৎ বসু বলেন, “যদি পর্যটককে চরম দামে পড়তে হয়, তারা বিকল্প গন্তব্য খুঁজে নেবে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
বৃহত্তর চিত্র
হিমালয়ের লাদাখ, স্পিটি বা উত্তর সিকিমের মতো এলাকায় গত দুই বছরে পর্যটক বেড়েছে প্রায় ৪৫ %। কিন্তু রাস্তাঘাট ও লজিস্টিক সুবিধা একই হারে বাড়েনি। চাহিদা–জোগানের ব্যবধানেই খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক। পাশাপাশি ‘সিজনাল’ ব্যবসা হওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো মাত্র ৪–৫ মাস আয় করে সারা বছরের খরচ চালাতে বাধ্য—ফলেই দামের আশ্চর্য উল্লম্ফন।
এর গুরুত্ব কী
পাহাড়ে দাম বেশি—এটাই যেন অলিখিত নিয়ম। তবু ডিমের মতো মৌলিক পণ্যে ৩০ গুণ দামের ঘটনায় এই বার্তা স্পষ্ট: পর্যটন প্রবাহ ও স্থানীয় জীবিকার মধ্যে টেকসই সমন্বয় ছাড়া উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিবহন ভর্তুকি, স্থানীয় কৃষি উৎসাহ এবং মূল্যতালিকা স্বচ্ছ রাখার মতো পদক্ষেপ এখন জরুরি।
এরপর কী
• রাজ্য পর্যটন বিভাগ একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড রেইট কার্ড’ প্রকাশের কথা ভাবছে, যাতে জনপ্রিয় খাবারের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারিত থাকবে।
• স্থানীয় কো-অপারেটিভ চালু করে ডিম, দুধ ও সবজি সমতল থেকে সরাসরি আনতে চাইছে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন।
• ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো পর্যটন মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালুর দাবি তুলেছে।
সব পক্ষ সম্মত হলে পরের মৌসুমে হয়তো ৬০০ রুপির ডিম আর পর্যটককে চমকে দেবে না।
শেষ কথা
পাহাড়ি পথে দুর্লভ চাহিদা ও দুষ্কর জোগানের ফাঁকে ডিম-দ্রামের ‘বিস্ফোরণ’ আসলে বড় এক শিক্ষার ইঙ্গিত—পর্যটন শুধু ছবি-স্মৃতি নয়, জটিল অর্থনীতি ও ন্যায্যতার গল্পও বটে।