শ্রীলঙ্কায় ইতিহাস গড়ল লিটনের বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কায় ইতিহাস গড়ল লিটনের বাংলাদেশ

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে ৮ উইকেটের জয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুরুষ দল। লিটন দাসের নেতৃত্বে ৩ ম্যাচের সিরিজ ২–১ ব্যবধানে জিতে টাইগাররা ঘরে তুলেছে ট্রফি, যা সব সংস্করণ মিলিয়ে লঙ্কায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিরিজ জয়। শেষ ম্যাচে অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান মাত্র ১১ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন, আর ব্যাটে অপরাজিত ৭৩ রানের ঝলক দেখান তানজিদ হাসান। সিরিজ–সেরা লিটন (৬, ৭৬, ৩২) ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা ফেরান, বোলিংয়ে শীর্ষে ছিলেন মেহেদী ও রিশাদ হোসেন (৪টি করে)।

কিভাবে এই পর্যন্ত এলাম

পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজে ০–১ পিছিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ডাম্বুলায় দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে লিটনের ৭৬ ও স্পিন ত্রয়ের (তানজিম, রিশাদ, সাকিব) দাপটে ৮৩ রানে জিতে সমতা ফেরায় দল। ফাইনাল ম্যাচে উইকেট পড়তে থাকে শেখ মেহেদীর ঘূর্ণিতে—পাওয়ার প্লে শেষেই শ্রীলঙ্কা ৪৩/৪! শেষ পর্যন্ত ১৩১ রানের লক্ষ্যে নেমে লিটন–তানজিদের ৭৪ রানের জুটি দ্রুতই ম্যাচের পথ সুগম করে। ১৬তম ওভারে জয়ের ছক্কা মেরে নতুন ইতিহাস লেখেন তানজিদ।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

৩ – সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ফিফটির সংখ্যা; লঙ্কানদের কোনোটি নেই।

২০ – তিন ম্যাচে বাংলাদেশের ছক্কা, শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৭টি বেশি।

১১ – মেহেদী হাসানের খরচা করা রান, যা কলম্বোর ওই ভেন্যুতে বাংলাদেশের সেরা স্পেল।

২ – শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের জয়ী সিরিজ (২০১৭ টেস্টের পর)।

৭ – টানা টি–টোয়েন্টি হারে ভেঙে ফের জয়ে ফেরা টাইগারদের নতুন ধারাবাহিকতার সূচনা।

প্রতিক্রিয়া

ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন বলেন, “প্রথম ম্যাচের পর সবাই চরিত্র দেখিয়েছে। মানুষ স্মার্ট ক্রিকেট চায়, ছেলেরা সেটা করে দেখিয়েছে।” ম্যান অব দ্য ম্যাচ মেহেদী হাসানের উপলব্ধি, “একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি—কোচ ও অধিনায়কের আস্থাই প্রেরণা।” সামাজিক মাধ্যমে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা লিখেছেন, “ঘরের বাইরে স্পিন নির্ভর এমন জয় আগামী বিশ্বকাপের আগে বড় বার্তা।” শ্রীলঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড স্বীকার করেছেন, “বাংলাদেশ স্পিন ও পাওয়ার হিটিংয়ে দুটো দিকেই এগিয়ে গিয়েছিল।”

এর গুরুত্ব কী

যেখানে গত আট মাসে পাকিস্তান ও আমিরাতে টানা ছয় টি–টোয়েন্টি হারে সমালোচিত হচ্ছিল দল, সেখানে উপমহাদেশেরই আরেক শক্ত ঘরের মাঠে সিরিজ জয় টাইগারদের আত্মবিশ্বাস ফেরাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (ভারত–শ্রীলঙ্কা) আগে একই কন্ডিশনে এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের দল বাছাইয়ে দিকনির্দেশনা দেবে। তাছাড়া মেহেদী–রিশাদদের মতো তরুণ স্পিনারা নিজেরা প্রমাণ করেছেন যে, সাকিব–মিরাজের পরবর্তী ধারা গড়ে উঠছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

দল বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকায় ফিরে ২০ জুলাই থেকে মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি নেবে। তিন ম্যাচের ওই লড়াই চলতি বছরের আইসিসি সুপার লিগের বাইরে হলেও দুই দলে বিশ্বকাপের স্কোয়াড চূড়ান্ত করতে বড় পরীক্ষা। টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, ঢাকার উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হতে পারে—তাই স্কোরিং প্ল্যান নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। লিটন ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, “সিরিজ জিতেছি ঠিকই, কিন্তু ঘরের মাঠে কাজটা আরও কঠিন; শ্রোতা–সমর্থকরা এবার জয়টা কাছ থেকে দেখতে চান।”

More From Author

সকালের নাস্তা বাদ দিচ্ছেন? ৩টি ভুল বদলালেই ঝুঁকি কমবে

সুইদায় চিকিৎসা বহরে ইসরায়েলি হামলা: মানবিক সহায়তা রক্ষায় উদ্বেগ বাড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *