রবিনসন-জ্যাকবস জুটিতে প্রোটিয়াদের উপর ২১ রানের কিউই দাপট
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে চলমান ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২১ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বুধবার রাতে কিউইদের ৫ উইকেটে ১৭৩ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা থেমে যায় ১৫২ রানে। নিরাইভ সময়ে টিম রবিনসন (৭৫*) ও অভিষিক্ত বেভন জ্যাকবস (৪৪*) ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০৩ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে মাঠে নামা সাউথ আফ্রিকা মাত্র ৬২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এই জয় দিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজে দুই পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সমান পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে তারা পিছিয়ে গেছে। পরের ম্যাচে শুক্রবার স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে কিউরা।
ঘটনাপ্রবাহ
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৯.৪ ওভারে ৭০/৫—সেই অবস্থায় হারারে গ্যালারিতে নিস্তব্ধতা। তখন ক্রিজে এলেন টিম রবিনসন ও বেভন জ্যাকবস। ধীরস্থির শুরু, পরে স্পিনারদের মারমুখী ব্যবহার; ৪৫ বলের মধ্যে আসে ফিফটি জুটি। শেষ পাঁচ ওভারে নিউজিল্যান্ড তোলে ৬৮ রান, যার ৩৪ রানই আসে হেনরি, ডাফি ও সোধির এক একটি ওভারে। ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়ারা প্রথম তিন ওভারে ৩০ তোলে, কিন্তু ম্যাট হেনরির ওভারে লুয়ান প্রিটোরিয়াস ফিরতেই ছন্দপতন শুরু। ক্রমাগত উইকেট পড়ে ১০ ওভারে স্কোর ৬২/৫। ডেওয়াল্ড ব্রেভিস কিছুটা লড়াই করেন (৩৫), কিন্তু হেনরি আবার ফিরিয়ে দিলে ম্যাচ কার্যত শেষ। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৯ রান, ডাফি মাত্র ৭ রান খরচ করলে কিউইরাই হাসে।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
১০৩ – রবিনসন–জ্যাকবস ষষ্ঠ উইকেট জুটি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষ ‘ডেথ’ ওভারে সর্বোচ্চ।
৫৭ – রবিনসনের খেলায় ব্যবহৃত বল সংখ্যা; স্ট্রাইকরেট ১৩১.৫৮।
২১ – নিউ জিল্যান্ডের জয়ের ব্যবধান।
৬২/৫ – দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ১০ ওভারের স্কোর, যা ম্যাচের মোড় স্থির করে দেয়।
২ – নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট, সমান ম্যাচে সর্বোচ্চ।
প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্ডনার বলেন, "রবিনসন ও বেভনের ইনিংস না হলে ১৪০-এরও কম হতো। চাপের মধ্যে দুজন যেভাবে ম্যাচ পড়লো সেটা বিশেষ." অপরদিকে প্রোটিয়া অধিনায়ক রিজা হেনড্রিকস হতাশ স্বরে বলেন, "আমরা আগ্রাসী শুরু চেয়েছিলাম, কিন্তু টপ-অর্ডারের উইকেট হারানোয় লক্ষ্য দূরে সরে যায়।" জিম্বাবুয়ের প্রাক্তন ওপেনার গ্রান্ট ফ্লাওয়ার হারারের টিভি সম্প্রচারে মন্তব্য করেন, "এই পিচে ধৈর্যই মূল। কিউইরা সেটা করেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা করেনি।"
বিশ্লেষণ
হারারের নির্লিপ্ত উইকেটে ১৬০-১৭০ স্কোরই ধরা হয় ‘প্যার’। নিউজিল্যান্ড সেখানে ১৭৩ তোলে শেষ ৬ ওভারে ৯৫ রান করে, যা আধুনিক টি-টোয়েন্টির ‘ফিনিশিং টেমপ্লেট’ পরিষ্কার করে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড টপ অর্ডার ভাঙার পরও মিডল অর্ডারের স্থিরতা দেখায়। রবিনসন ৩২ বছর বয়সে দলে ফিরে প্রমাণ করলেন অভিজ্ঞতা কত মূল্যবান। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যা পুরনোটাই—টপ অর্ডার গেলে মিডল-লেট অর্ডারের ভঙ্গুরতা। তারা এখনো ‘মিলার’ বা ‘মার্করাম’দের খোঁজে, যারা চাপ সামলে ম্যাচ শেষ করতে পারবে। বোলিংয়েও ভ্যারিয়েশন কম; ডাফি-সোধিদের নাকাল করার মতো কনুই ভাঙ্গা স্লোয়ারের জবাব ছিল না।
এরপর কী
শুক্রবার একই ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। সে ম্যাচ জিতলেই ফাইনালে উঠা নিশ্চিত করবে কিউইরা। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে এখন মাত্র এক খেলাই আছে—রবিবার জিম্বাবুয়েকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে ও কিউইদের হার কামনা করতে হবে। তাই প্রোটিয়াদের জন্য অলিখিত সেমিফাইনাল শুরু এখন থেকেই: ব্যাটিং পুনর্বিন্যাস, বিশেষত চার-পাঁচ নম্বরে অভিজ্ঞ কাউকে ফেরানো এবং ইয়র্কার-ভিত্তিক ডেথ ওভার পরিকল্পনা সাজানোই তাদের বাঁচার উপায়।