ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নজরে শান্তি মার্ডি, আদর্শ ঋতুপর্ণা চকমা

ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নজরে শান্তি মার্ডি, আদর্শ ঋতুপর্ণা চকমা

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে মঙ্গলবার ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে ৬–০ গোলের জয়ে বাংলাদেশের বড় অস্ত্র হয়ে ওঠেন ফরোয়ার্ড শান্তি মার্ডি। মাত্র ১৮ বছরের শান্তি ম্যাচে পরপর তিনটি গোল করে (১৭, ৩১ ও ৫৬ মিনিট) ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক সাজান। খেলা শেষে বাফুফে-র ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “অনেক বড় খেলোয়াড় হতে চাই, ঋতু আপুর মতো।” তাঁর কথা ‘ঋতু আপু’ অর্থাৎ জাতীয় সিনিয়র দলের ডিফেন্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা। গ্রামের মাটিতে বড় হওয়া এই তরুণী নিজের সাফল্য উৎসর্গ করেছেন কৃষক বাবা-মা ও কোচদের।

কিভাবে এই পর্যন্ত এলাম

খুলনার পাইকগাছার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শান্তির ফুটবল যাত্রা শুরু স্কুল পর্যায়ের প্রাথমিক প্রতিযোগিতা দিয়ে। এলাকায় কোচ লাইজু স্যার ও বিপুল স্যারের অনুপ্রেরণায় জেলা দলে ঢোকেন। ২০২2 সালে বিকেএসপির একটি প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত খেলার পর অনন্যা ম্যাডাম ও লিটু স্যার তাঁকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কেম্পে নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই অনূর্ধ্ব-১৭ ও পরে অনূর্ধ্ব-২০ দলে স্থায়ী জায়গা।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

১ – আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি মার্ডির প্রথম হ্যাটট্রিক।

৩ – ভুটানের বিপক্ষে তাঁর গোল সংখ্যা

৬ – বাংলাদেশ দলের সমষ্টিগত গোল

২০০৩ – শান্তি মার্ডির জন্ম সাল।

২ – টুর্নামেন্টটিতে বাংলাদেশের ম্যাচ বাকি আছে।

প্রতিক্রিয়া

হ্যাটট্রিকের পর বাবা ফোনে শুধু ‘ভালো খেলেছিস’ বলেও পুরো ম্যাচ দেখতে পারেননি, জানালেন শান্তি। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন প্রশংসা করে বললেন, “ফিনিশিং-এ ওর ঠান্ডা মাথা পুরো দলকে আলাদা মাত্রা দেয়।” জাতীয় দলের ডিফেন্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ছোট বোনের সাফল্যে গর্বিত, সামনে আরও বড় কিছু দেখার অপেক্ষায়।” ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী মনে করেন, এই কিশোরীরা প্রমাণ করছে নারী ফুটবলে ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ থেমে যায়নি।

বৃহত্তর চিত্র

২০১৮ সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ শিরোপা, ২০২২ সাফ সিনিয়র শিরোপা— ধারাবাহিক সাফল্যের পরও নারী ফুটবলারদের সামগ্রিক সুবিধা এখনো সীমিত। অধিকাংশই গ্রামীণ পরিবার থেকে আসা, আর্থিক স্বচ্ছলতা কম। তবু মাঠে তাদের পারফরম্যান্স সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে ফেভারিট বানিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিক সক্ষমতাকে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘষেমেজে আরও সামনের ধাপে নেওয়া গেলে ২০২7 এশিয়ান গেমসে পদকও অসম্ভব নয়।

এরপর কী

গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ নেপালের বিরুদ্ধে আগামী শনিবার। ওই ম্যাচ জিতলে ফাইনাল নিশ্চিত। শান্তি মার্ডি-র লক্ষ্য এখনই পরিষ্কার— “টাইটেলটা বাড়িতে নিতে চাই।” বাফুফে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, টুর্নামেন্ট শেষে সেরা পাঁচ উদীয়মান খেলোয়াড়কে স্পেশাল স্কলারশিপ দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে শান্তি সবচেয়ে এগিয়ে। কোচ ছোটন বলছেন, “ওকে আমরা শিগগিরই সিনিয়র ক্যাম্পে আনব, যাতে ২০২৫ সাফ সিনিয়র টুর্নামেন্টে রিতু-শান্তি জুটি গড়ে তোলা যায়।”

More From Author

গর্ভাবস্থায় সাইকেডেলিক মাশরুম নিয়ে বিতর্ক: আদিবাসী জ্ঞান বনাম বিজ্ঞান

আফগান পুনর্বাসন তথ্য ফাঁস: ব্রিটেনে অস্থিরতার আশঙ্কা, সরকারের জরুরি ব্যবস্থা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *