জুলাই শহীদ দিবস: দেশজুড়ে দোয়া, আলোচনা ও রাজনৈতিক বাদানুবাদ

জুলাই শহীদ দিবস: দেশজুড়ে দোয়া, আলোচনা ও রাজনৈতিক বাদানুবাদ

১৬ জুলাই বুধবার বরিশাল, খুলনা ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় ‘জুলাই শহীদ দিবস’ পালিত হয়েছে। বিএনপির নেতারা, জেলা প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দিনের শুরু থেকে দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণার আয়োজন করে। বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে বক্তৃতা দেন, খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্য প্রার্থনার নেতৃত্ব দেন, আর কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সভায় ডিসি ও পুলিশ সুপার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি ঘিরে মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক রাজনীতিকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উঠে এসেছে, যা দিবসটির ঐতিহাসিকতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।

পটভূমি

‘জুলাই শহীদ দিবস’ মূলত ১৬ জুলাই তারিখকে ঘিরে উদযাপিত একটি স্মরণ-আলোচনা, যেখানে ২০০৯-এর পর থেকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে নিহত নেতা-কর্মীদের স্মৃতি তুলে ধরা হয়। দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকলেও ২০২4 সালে বড় আকারে পালনের মাধ্যমে এটি জাতীয় আলোচনায় আসে। এবছর আবারও বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে।

ঘটনাপ্রবাহ

দৈনিক নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, বরিশালের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অডিটোরিয়ামে বিএনপির সমাবেশে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, “যে-ই সরকারের সমালোচনা করছে, তাকেই ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়া হচ্ছে।” সভায় ১৫ বছরে ‘ফ্যাসিবাদের থাবায়’ বহু মৃত্যু হয়েছে দাবি করে শহীদ আবু সাঈদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। খুলনায় ডেইলি জনকণ্ঠ জানায়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনে সকাল ১১টায় দোয়া মাহফিলে অংশ নেন ভিসি প্রফেসর কানাই লাল সরকার ও শিক্ষক-কর্মচারীরা। কুমিল্লায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিকেলে আয়োজিত আলোচনা সভায়, ডিসি মো. আমিরুল কায়ছার ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে’ শহীদদের ভূমিকা তুলে ধরেন; পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান নিরাপদ রাজনীতির আহ্বান জানান।

প্রতিক্রিয়া

বিএনপি নেতারা দিবসটিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধের প্রতীক’ বললেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি। দলীয় সূত্রে তারা এটিকে “রাজনৈতিক স্টান্ট” হিসেবে বর্ণনা করলেও গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। স্থানীয় সুশীল সমাজ মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানায়—কেউ আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে জোর দিচ্ছেন, কেউ আবার ‘নতুন দিবস’ তৈরি করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন।

বৃহত্তর চিত্র

বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যা দিবস কিংবা গণতন্ত্র দিবসের মতো ঐতিহাসিক দিনগুলোর বাইরে নতুন নতুন স্মরণ-দিবস উদযাপনের প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলো আঞ্চলিক কিংবা দলীয় ইতিহাসকে জাতীয় বয়ানে রূপ দিতে চাইছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রয়টার্স-কে বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে স্মৃতি-রাজনীতিই বড় হাতিয়ার। ‘জুলাই শহীদ’ তার সাম্প্রতিক উদাহরণ।”

এরপর কী

দিবসটির আইনি বা জাতীয় স্বীকৃতি নেই; তবু আয়োজকেরা আগামী বছরগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিবসটি নিয়ে গবেষণা ও প্রামাণ্য দলিল প্রকাশ করলে তা রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে গিয়ে ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা এগিয়ে নেবে। meanwhile, জেলা প্রশাসনগুলোর অনেকে বলছে, যদি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দিকনির্দেশনা আসে, তবে ২০২৫ সাল থেকে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানসূচি বিবেচনা করা হবে।

More From Author

রবিনসন-জ্যাকবস জুটিতে প্রোটিয়াদের উপর ২১ রানের কিউই দাপট

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা ২১ জুলাই স্থগিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *