কলম্বোর রূপকথা: লঙ্কান মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

কলম্বোর রূপকথা: লঙ্কান মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

কলম্বো-র প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে (স্থানীয় সময়) শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টি–২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। শেখ মেহেদী হাসানের ৪-১১ ও তানজিদ হাসান তামিমের অপরাজিত ৭৪ রানে ভর করে ১৩৩ রানের সহজ লক্ষ্য ২১ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় লিটন দাসের দল। এটি যে শুধু লঙ্কান মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়, তা নয়—সামগ্রিকভাবেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-২০ সিরিজ জয়। ২০০২-এ টেস্ট অভিষেকের পর থেকে সব সংস্করণ মিলিয়ে শ্রীলঙ্কায় ২২টি সিরিজ খেলেও এত দিন শিরোপা ধরা দেয়নি। এবার সেই ‘অপূর্ণতা’ ঘুচল, দলকে মিলল নতুন আত্মবিশ্বাস ও ইতিহাসের সোনালি পালক।

ঘটনাপ্রবাহ

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শেখ মেহেদী হাসানের ঘূর্ণি জাদুয়ে ধস নামে লঙ্কান ইনিংসে। অফ স্পিনারটি দুই ওভারের মধ্যে ফেরান কুশল পেরেরা ও দিনেশ চান্ডিমালকে, পরে তুলে নেন আরও দুই উইকেট। ১৫ ওভারে শ্রীলঙ্কা ছিল ১০০/৭; শেষ ওভারে দাশুন শানকার ২২ রানে স্কোর দাঁড়ায় ১৩২/৭। জবাবে ইনিংসের প্রথম বলেই পারভেজ ইমন ফেরেন, তবে লিটন দাস ও তানজিদ তামিম ৫.৫ ওভারে যোগ করেন ৪৭ রান। ৭৪ রানে লিটন (২৬ বলে ৩২) ফিরলেও তামিম (৪৭ বলে ৭৪*, ১ চার, ৬ ছক্কা) ও তাওহীদ হৃদয় (২৫ বলে ২৭*) ১৬.৩ ওভারেই জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচ সেরা মেহেদী ও সিরিজ সেরা তামিমের হাত ধরে ড্রেসিংরুমে নামে স্বস্তি ও উৎসব।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

১—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়।

২—টানা ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার সংখ্যা (২য় ও ৩য় ম্যাচ)।

৪-১১—শেখ মেহেদী হাসানের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার।

৭৪*—তানজিদ হাসান তামিমের আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

২১—বল হাতে রেখেই লক্ষ্য ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।

২০০৩—সেটির পর প্রথমবার কলম্বোর প্রেমাদাসায় টানা দুই ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।

পটভূমি

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০—তিন ফরম্যাটেই লঙ্কান উপকূলে বাংলাদেশের সাফল্যের হিসেব ছিল গুটিকয় বিচ্ছিন্ন জয়ে আটকে। ২০১৭ নিদাহাস ট্রফিতে ২১৪ তাড়া করা ছাড়া বড় কোনো স্মৃতি নেই। এবারও সফর শুরু হয় ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া করে। তাই শেষ মুহূর্তে দলে ঢোকানো শেখ মেহেদী, তরুণ পেসার তানজিম সাকিবরা তৃতীয় টি-২০–তে একযোগে জ্বলে উঠে বদলে দেন ছবিটা।

বিশ্লেষণ

সিরিজ জয়ের মূল তিন উপাদান—(১) পাওয়ার প্লে-তে আগ্রাসী ব্যাটিং: লিটন-তামিম জুটি দুই ম্যাচেই দলের ভিত গড়েছে; (২) স্পিন ভ্যারিয়েশন: মেহেদী ও শামীম হোসেনের অফ স্পিনে বাঁ-হাতি লঙ্কানরা খুঁজে পায়নি বড় শট; (৩) ফিল্ডিং শার্পনেস: দুই ম্যাচে নেয়া ছয়টি কঠিন ক্যাচ ও দুটি রান-আউট চাপ বাড়িয়েছে। নির্বাচকরা দীর্ঘদিন পর বেঞ্চ ঘুরিয়ে তরুণদের সুযোগ দিয়েছেন এবং তা তাৎক্ষণিক ফল দিয়েছে।

এর গুরুত্ব কী

নিজেদের ফেভারিট কন্ডিশন ছেড়ে প্রতিপক্ষের ঘরে গিয়ে সিরিজ জয়ের অভিজ্ঞতা যেকোনো দলের গণতান্ত্রিক লক্ষ্যের মতোই মূল্যবান। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৬ টি-২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে আত্মবিশ্বাস বাড়ল, বেঞ্চ ডেপথেরও ইঙ্গিত মিলল। বিশেষ করে ব্যাটিং আক্রমণাত্মক মানসিকতার পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গেই পাস করেছে।

এরপর কী

তিন ম্যাচের জন্য বিশ্রাম কাটিয়ে এবার পাকিস্তান সফর করবে বাংলাদেশ, যেখানে লাহোরে খেলবে দুটি টেস্ট ও তিনটি টি-২০। কন্ডিশন কিছুটা মিল থাকায় লিটনরা এই জয়ের ছাপ টিম কম্বিনেশন ও আক্রমণাত্মক রণনীতি ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। নির্বাচকরা তামিম-মেহেদীকে দিয়ে সাজানো তরুণ-ভেটেরান মিশ্র দলই রাখতে পারেন, যাতে ২০২৭ বিশ্বকাপের আগেই প্রয়োগভিত্তিক প্রস্তুতি এগোয়।

More From Author

একঘেয়ে অফিসকে চাঙা করতে পাঁচ সহজ অভ্যাস বদলেই মিলছে নতুন উদ্যম

গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, কারফিউ জারি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *