আতলেতিকো মাদ্রিদে থিয়াগো আলমাদা: আরও এক বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইনের আগমন
লা লিগার ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদ যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) চ্যাম্পিয়ন আটলান্টা ইউনাইটেড থেকে আর্জেন্টাইন অধিনায়কত্ব পাওয়া তরুণ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলমাদাকে দলে টেনেছে। বুধবার (স্থানীয় সময়) এক যৌথ বিবৃতিতে দুই ক্লাব চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক ‘মার্কা’। ২২ বছর বয়সী আলমাদা কাতার-২০২২ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন, ফলে রদ্রিগো দে পল, নাহুয়েল মোলিনা ও আনহেল কোরেয়ার পর আতলেতিকোর চতুর্থ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলার হতে যাচ্ছেন তিনি। মার্কার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৯ সাল পর্যন্ত সই করা এ চুক্তির ট্রান্সফার ফি প্রায় ২৫-৩০ মিলিয়ন ইউরো। মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হলে জুলাইয়ের শুরুতেই আলমাদা দলটির প্রাক-মৌসুম ক্যাম্পে যোগ দেবেন।
প্রেক্ষাপট
আর্জেন্টিনার ক্লাব ভেলের সাসফিল্ডে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করা আলমাদা ২০২۲ সালে ১৬ মিলিয়ন ইউরো রেকর্ড ফিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস সাইড আটলান্টা ইউনাইটেডে পাড়ি জমান। সেখানে ৫১ ম্যাচে ১৩ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট করে দ্রুতই নজর কেড়েছেন ইউরোপের বড় দলগুলোর। কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির দলের অংশ হয়ে প্রথম এমএলএস-ভিত্তিক খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদে দীর্ঘদিন ধরেই আর্জেন্টাইন প্রভাব স্পষ্ট—ডিয়েগো সিমিওনে নিজে আর্জেন্টাইনের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার, তার অধীনে খেলেন দে পল, মোলিনা, কোরেয়া ও হোসে গিমেনেজরা। গত মৌসুমে লিগে তৃতীয় হওয়া ক্লাবটি সৃজনশীল মিডফিল্ডের ঘাটতি মেটাতে খুঁজছিল দ্রুতগতির ‘নম্বর-১০’; আলমাদা ঠিক সে প্রোফাইলেই মানানসই। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে আটলেতিকোর বর্তমান স্কোয়াডে লাতিন আমেরিকান বিশ্বকাপজয়ীর সংখ্যা দাঁড়াল চারজন, যা লা লিগায় সর্বোচ্চ।
প্রতিক্রিয়া
চুক্তি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলমাদা লিখেছেন, “ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকে। সিমিওনে ও মেসিদের সঙ্গে জাতীয় দলে থাকার অভিজ্ঞতা আমাকে পথ দেখিয়েছে। অবশেষে লা লিগায় নিজের সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ পেয়ে আমি রোমাঞ্চিত।” আটলেটিকোর ক্রীড়া পরিচালক আন্দ্রে বের্তা স্প্যানিশ টেলিভিশন ‘লা সেক্সতা’কে বলেন, “আলমাদার বয়স অল্প, কিন্তু বড় ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতা ও সাহস আছে। আমাদের মিডফিল্ডকে তিনি আরও সৃষ্টিশীল ও গতিময় করে তুলবেন।” এমএলএস কমিশনার ডন গারবার আলমাদার বিদায়কে “লিগের জন্য গর্বের মুহূর্ত” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কারণ এটি “যুব উন্নয়নে এমএলএস-এর শক্তি দেখায়”।
বিশ্লেষণ
সিমিওনের ৪-৪-২ ছকে আলমাদাকে মূলত বাম-সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনে দেখা যেতে পারে, যেখানে তিনি দে পলের সঙ্গে রোটেশন করবেন। মার্কা জানায়, গত মৌসুমে আটলেতিকোর প্রতি ৯০ মিনিটে ‘চান্স ক্রিয়েশন’ ছিল ১.৩, যা রিয়াল মাদ্রিদের (২.১) তুলনায় অনেক কম। আলমাদা এমএলএস-এ প্রতি ৯০ মিনিটে গড়ে ৩.২ ‘কী পাস’ এবং ৭.১ ‘প্রগ্রেসিভ ক্যারি’ করেছেন, যা দলে সৃষ্টিশীলতার ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। অতিরিক্ত স্বল্পদৈর্ঘ্য দৌড়, বল টেনে সামনের অর্ধে প্রবেশ ও সেট-পিস দক্ষতার কারণেই তাকে ধরা হয় ‘মেসি-পরবর্তী’ প্রজন্মের অন্যতম সম্ভাবনাময় তারকা। তবে সিমিওনের অধীনে রক্ষণাত্মক শৃঙ্খলা রপ্ত করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই; বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্ষণের কাজে অনভ্যস্ততাই হতে পারে তরুণের মূল চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তী পদক্ষেপ
আলমাদা এই সপ্তাহেই মেডিকেল পরীক্ষা দিতে মাদ্রিদে আসছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ জুলাই ওসাসুনার বিপক্ষে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে তার লাল-সাদা জার্সিতে অভিষেক হতে পারে। আটলেতিকো ইতোমধ্যে ফরাসি ডিফেন্ডার রেনান লডিকে বিক্রির অর্থের একটি বড় অংশ এই ট্রান্সফারে খরচ করেছে। ক্লাব সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে, স্কোয়াডের আরেক মিডফিল্ডার সাউল নিগেসকে ছেড়ে দিয়ে বেতন কাঠামো ভারসাম্য করা হবে। সব মিলিয়ে, নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সিমিওনে দলে পেয়ে যাবেন একটি তরতাজা ‘নম্বর-১০’, আর আলমাদা পাবেন ইউরোপে নিজেকে মেলে ধরার কাঙ্ক্ষিত মঞ্চ।