আইসিসির নতুন র্যাঙ্কিংয়ে নজর কাড়লেন রিশাদ, জেল্লা বাড়াল বাংলাদেশের দল
আইসিসির সদ্য প্রকাশিত টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বড়সড় উল্লম্ফন করেছেন বাংলাদেশের তরুণ লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাম্বুলা সিরিজে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে তিনি বোলারদের তালিকায় এক লাফে ১২ ধাপ এগিয়ে এখন ১৭ নম্বরে—নিজের ক্যারিয়ারের সেরা অবস্থান। একই আপডেটে শরিফুল ইসলাম, লিটন দাস, পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। অন্যদিকে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের শীর্ষে ফিরেছেন ইংল্যান্ডের জো রুট, আর অস্ট্রেলিয়ান স্কট বোল্যান্ড ছয় ধাপ এগিয়ে উঠেছেন টেস্ট বোলারদের ছয়ে। দলগত র্যাঙ্কিং বদলায়নি, তবে ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জীবিত টাইগার শিবির আগামী মাসের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাছাই ম্যাচগুলোর আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে।
মূল তথ্য
• রিশাদ হোসেন: ১২ ধাপ লাফিয়ে টি-টোয়েন্টি বোলার তালিকায় ১৭ নম্বর।
• শরিফুল ইসলাম: ২০ ধাপ এগিয়ে ৫৭ নম্বর।
• মুস্তাফিজুর রহমান: ২৬ নম্বরেই স্থির।
• লিটন দাস: ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ৭ ধাপ এগিয়ে এখন ৪৫।
• পারভেজ হোসেন ইমন: ১২ ধাপ অগ্রগতি, ৮৫ নম্বর।
• মেহেদী হাসান মিরাজ: অলরাউন্ডার বিভাগে ২১ ধাপ এগিয়ে ৩৯।
• আন্তর্জাতিক মঞ্চে—টেস্টে জো রুট ফের ব্যাটসম্যানদের শীর্ষে, বোলারদের শীর্ষ দশে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচজন।
প্রেক্ষাপট
গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে দুই টেস্ট ও তিনটি করে ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হাতছাড়া হলেও ডাম্বুলার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ৮৩ রানে জিতে সমতা আনায় স্বস্তি মেলে টাইগার শিবিরে। সেই ম্যাচেই ৩.২ ওভার স্পেলে ৩ উইকেট নেন রিশাদ, পাওয়ারপ্লে ভাঙেন শ্রীলঙ্কার মেরুদণ্ড। সিরিজ শেষে আইসিসি গ্লোবাল র্যাঙ্কিং কমিটির নিয়মিত হালনাগাদেই ধরা পড়ল তরুণদের পারফরম্যান্স। অভিজ্ঞ সিনিয়রদের পাশাপাশি নতুনদের দ্রুত এগিয়ে আসা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকেই সমর্থন করছে।
প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, "র্যাঙ্কিং আসলে একটা বাই-প্রোডাক্ট। তবে খেলোয়াড়রা যখন ঢাল হয়ে সংখ্যাটা সামনে দেখাতে পারে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বাড়ে। রিশাদ-শরিফুলরা শিখছে যে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই শেষ কথা।" বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার মনে করেন, "দীর্ঘদিন পর আমরা আবার স্পিন বিভাগে একজন বৈচিত্র্যপূর্ণ লেগ-স্পিনার পেলাম, এটিই বড় প্রাপ্তি।" সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রিশাদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন লিটন-সাকিবরা; শ্রীলঙ্কার নুয়ান তুষারাও টুইটে লিখেছেন, "লেগিরা লিড দ্য ওয়ে!"
বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল দীর্ঘদিন ধরেই বোলিং নির্ভর। মুস্তাফিজ-তাসকিনরা মাঝেমধ্যে চমক দেখালেও ‘মিস্ট্রি’ স্পিন ঘরানার অভাব ছিল। এশিয়ান কন্ডিশনে লেগ-স্পিনাররা সাফল্য পেলে আইসিসি ইভেন্টে বৈচিত্র্য বাড়ে—ইতিহাস বলছে পাকিস্তানের শাদাব খান, ভারতের চাহাল কিংবা আফগানিস্তানের রশিদ সেই উদাহরণ। রিশাদের দ্রুত উত্থান তাই শুধু সংখ্যা নয়, ট্যাকটিক্যাল অ্যাডভান্টেজও। অন্যদিকে শরিফুল ও তানজিম সাকিবের মত নতুন পেসাররা র্যাঙ্কিংয়ে যত উঁচুতে উঠবে, অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা তত বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিপিএল-জাতীয় লিগ থেকে শুরু করে আট মাসের ডমেস্টিক ক্যালেন্ডার সিনক্রোনাইজড হলে র্যাঙ্কিংয়ের এই ধারা স্থায়ী হবে।
এরপর কী
আগামী মাসে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে আতিথ্য দেবে বাংলাদেশ। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বাছাইয়ের পয়েন্ট হিসেবেও ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ। রিয়াদ-তামিম না থাকায় জুনিয়রদের ওপরেই চোখ রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট। রিশাদ-শরিফুলদের জন্য এটি বড় পরীক্ষা—একদিকে র্যাঙ্কিং ধরে রাখা, অন্যদিকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা। বিসিবি সূত্র বলছে, সিরিজের আগে মিরপুরে তিন সপ্তাহের বিশেষ স্পিন-পেস হাইব্রিড ক্যাম্প চালু হচ্ছে, যেখানে তথ্যভিত্তিক বোলিং পরিকল্পনা শেখানো হবে। র্যাঙ্কিংয়ের মিষ্টি স্বাদ পেয়েও তাই স্বপ্ন নয়, কঠোর পরিশ্রমই বার্তা: ‘অর্জনটাকে এখন মাঠে প্রমাণে রূপ দিতে হবে।’