ফরিদপুরের চার আসনে বিএনপি-জামায়াতের দৌড়ঝাঁপ, নতুন দল এনসিপি এখনো দৃশ্যপটে নেই

ফরিদপুরের চার আসনে বিএনপি-জামায়াতের দৌড়ঝাঁপ, নতুন দল এনসিপি এখনো দৃশ্যপটে নেই

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফরিদপুর জেলার চারটি আসনে (১-৪) বিএনপির অন্তত ১৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন দলের দুই প্রয়াত মহাসচিব—কে এম ওবায়দুর রহমান ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের সন্তান শামা ওবায়েদ ও চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। এলাকায় ব্যানার–পোস্টার, সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই চলছে প্রচারণা; একই সঙ্গে বেড়েছে অন্তর্কোন্দল, এমনকি সহিংসতাও।

একই সময়ে জামায়াতে ইসলামী চারটি আসনেই প্রাথমিক প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে, আর মাত্র এক বছর আগে নিবন্ধন চাওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক ও সাংগঠনিক জট ছাড়াতে ব্যস্ত, ফলে ফরিদপুরে এখনো তাদের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। জেলা রাজনীতির এই হিসাব–নিকাশ নির্বাচনপূর্ব জাতীয় আন্দোলন, সংরক্ষিত নারী আসন বিতর্ক এবং মাঠ প্রশাসন পুনর্গঠনের জাতীয় আলোচনার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।

পটভূমি

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী) আসনে সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সাবেক নেতা শামসুদ্দীন মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র যে গত মাসেই দু’পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। একই আসনে আরও পাঁচজন নেতা দলীয় মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) কেন্দ্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শামা ওবায়েদ। গত বছর এক সমর্থক হত্যা মামলায় তাঁর ও কৃষক দল নেতা শহীদুল ইসলামের নাম এসে পড়ে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে শহীদুলকে পাশের ফরিদপুর-৪ এ সরিয়ে দিলেও শামার চাচা কে এম জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বার্তা দিয়েছেন, যা নতুন করে সমীকরণ বদলাতে পারে।

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে নায়াব ইউসুফ, সৈয়দ মোদাররেছ আলী ও যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসানের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই স্পষ্ট। বাবার ‘ভোটব্যাংক’ ভরসা করে নায়াব এগিয়ে থাকার দাবি করলেও অন্য দু’জন আন্দোলন-মামলার ‘সাহসী ইতিহাস’ দেখিয়ে মনোনয়ন চাইছেন।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) এ শহীদুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন জহিরুল হক শাহজাদা, আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ও আলমগীর কবির।

বৃহত্তর চিত্র

প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে জামায়াতের নায়েবে আমির এ এম তাহের জানান, দলটি ফরিদপুরের চার আসনেই ‘সময়মতো প্রচারণা’ শুরু করেছে এবং উচ্চকক্ষ, সংরক্ষিত নারী আসন–সহ সংসদের সব পর্যায়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) চায়। অন্যদিকে, মহিলা পরিষদ শক্ত ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে—সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশ ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে’।

রাজনৈতিক ময়দানে নীরব থাকলেও এনসিপি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরিশালে পথসভায় বলেছেন, দলটি ‘জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নিবন্ধন ও প্রতীক নিশ্চিত করে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামবে’। ফরিদপুর জেলা কমিটিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকায় এখনো কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষিত হয়নি।

ঢাকায় সরকার ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসন পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছে, জুলাইয়ের মধ্যে নতুন জেলা প্রশাসকদের তালিকা চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে ডিসি ও ইউএনও বদলির এই উদ্যোগকে রাজনৈতিক দলগুলো ‘নির্বাচনী কৌশল’ বলে দেখছে।

গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা

৪টি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী : ১৮ জন

জামায়াতের প্রাথমিক প্রার্থী : ৪ জন

ফরিদপুর-২ আসনের জন্য হত্যা মামলার আসামি : ১৩ জন (শামা ওবায়েদসহ)

এনসিপির মাঠপর্যায়ে কর্মী সমাবেশ : শূন্য

জুলাই পর্যন্ত নির্বাচনী প্রশিক্ষণ পাবে ডিসি : ২১ জন (যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)

প্রতিক্রিয়া

শামা ওবায়েদ (বিএনপি) প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৈতৃক আসনের মানুষের সেবা করতে চাই, মামলা-মোকদ্দমা দমাতে পারবে না।’ তাঁর স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন এমন ঘোষণা দিয়ে কেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের বিরোধী অংশ আমাকে প্রার্থী করার চাপ দিচ্ছে, আমি আওয়ামী লীগের ৯০ শতাংশ ভোট পাব।’

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সোহরাব হোসেন জানান, ‘ঘাসফড়িং নয়, মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক শক্তিই আমাদের মূল ভরসা।’

এনসিপির ফরিদপুর সমন্বয়কারী সৈয়দা নিলিমা দোলা বলেন, ‘জুলাই আমাদের জন্মমাস, কাজেই সাংগঠনিক সংস্কার শেষ করেই নামব।’

নারী অধিকারকর্মী ফওজিয়া মোসলেম মনে করেন, ‘বংশধরদের রাজনীতিতে আসা দোষের নয়, কিন্তু সংরক্ষিত নারী আসন তুলে দিলে এই মতান্তরের ভেতরেই নারী নেতৃত্ব চাপা পড়বে।’

এরপর কী

• জুলাইয়ের মধ্যেই জেলা প্রশাসক ও ইউএনও পর্যায়ে বড় আকারের রদবদল চূড়ান্ত করতে চায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

• নির্বাচন কমিশন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে; তখনই আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা দাখিল বাধ্যতামূলক হবে।

• বিএনপি আগস্টের মধ্যে কেন্দ্র থেকে ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ নীতির তালিকা পাঠাবে—দলীয় সূত্রের দাবি।

• এনসিপি সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামার কথা বললেও দলীয় প্রতীক না পেলে স্বতন্ত্র কৌশলের আভাস দিচ্ছে।

• সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) ও সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আগামী সপ্তাহে আরেক দফা বৈঠক ডেকেছে; সেখানেই সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

More From Author

অ্যামহার্স্টে এমিলি ডিকিনসন মিউজিয়াম: নিভৃত কবির অদেখা দুনিয়া

গ্যাস না থাকায় ৯৬ দিন বন্ধ চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা, ক্ষতি ছুঁয়েছে ৫০০ কোটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *