চট্টগ্রামের বিক্ষোভে গুলি, মেঘনায় জলদস্যু গ্রেপ্তার, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক খুন: বেড়ে চলা আগ্নেয়াস্ত্রের ছোবল
চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর–বহদ্দারহাট এলাকায় গত বছরের ১৬ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা—প্রথম আলো এখন সেই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে নতুন ছবি, ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান প্রকাশ করেছে। একই দিনে চাঁদপুর নৌ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে কুমিল্লা–নারায়ণগঞ্জ নদীপথের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ‘সোহাগ গ্রুপ’-এর প্রধান মো. সোহাগ মিয়া; আদালত তাকে দু’দিনের রিমান্ডে দিয়েছে (ডেইলি জনকণ্ঠ)। আর পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড়ে তৃণমূল নেতাকে গুলি ও চাপার কোপে হত্যা করার অভিযোগে বহুবার সাজাপ্রাপ্ত দুষ্কৃতী জাকির মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ (টিভি৯ বাংলা)। তিনটি ঘটনাই দেখাচ্ছে, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন থেকে জলদস্যুতা—সর্বত্রই বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ও সহিংসতা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে অভিযানে সফল হলেও নিরাপদ সড়ক, নদীপথ ও রাজনীতির জন্য বড় ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ এখনও অনুপস্থিত বলে বিশ্লেষকদের মত।
প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও আশপাশের সড়কে নিরাপদ সড়ক, বাসভাড়া ও নানা দাবি নিয়ে নামেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম আলোর ভিডিওতে দেখা যায়, মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাঁঝালো লাঠিচার্জের পাশাপাশি মোটরসাইকেল থেকে ‘গুলি ছুড়তে ছুড়তে’ এগিয়ে আসেন। সেদিন অন্তত ৩০ জন আহত হন, বেশ কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর হয়। বছর গড়াতেই স্মৃতিচারণা আবার রাজপথের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মূল তথ্য
• চট্টগ্রাম সংঘর্ষ : প্রত্যক্ষদর্শীরা ১২–১৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন, আহত ৩০ (প্রথম আলো)।
• মেঘনায় সোহাগ গ্রুপ : মেঘনা নদীপথে একাধিক বেআইনি চাঁদা আদায়, পুলিশের ওপর হামলা, শর্টগান থেকে পুলিশের ১১ রাউন্ড গুলি ছোড়া (ডেইলি জনকণ্ঠ)।
• ভাঙড় হত্যা : রাজ্জাক মোল্লা হত্যায় ধৃত জাকির মোল্লার নামে দুই দফা ৭+৭ বছর কারাদণ্ড, সর্বশেষ গ্রেপ্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যা (টিভি৯ বাংলা)।
প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীরা আগে হামলা করে।’ তবে পুলিশ সূত্রে অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের অনেককে ‘পরিচয় নিশ্চিত’ করা হলেও চার্জশিটে তাদের নাম নেই। নদীপথে অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকা নৌ পুলিশ কর্মকর্তা আজমগীর হোসাইন বলেন, “সোহাগকে ধরায় পুরো চাঁদাবাজ চক্র ভাঙা শুরু হয়েছে।” ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা নিহতের ঘটনায় রাজ্য বিজেপি ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ অভিযোগ তুলেছে, আর তৃণমূল দাবি করছে, ‘ব্যক্তিগত শত্রুতা’ মূল কারণ।
বিশ্লেষণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ড. তানজিম কবির মনে করেন, “দলীয় রাজনীতিতে অস্ত্র থাকা এখন ক্ষমতা প্রদর্শনের সহজ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পুলিশ সফল হলেও অস্ত্রের উৎস—সীমান্ত ও অবৈধ বাজার—বন্ধ না হলে সহিংসতা কমবে না।” ক্রিমিনোলজিস্ট ফারহানা ইসলাম বলেন, নদীপথে জলদস্যুতা বেড়েছে কারণ ‘চাঁদা না দিলে চলবে না’—এমন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “সামাজিক রুটে অস্থিরতা এখন আন্তঃসীমান্ত ছড়াচ্ছে, তথ্য ও অস্ত্র—দুটোই দ্রুতগতিতে চলাচল করছে।”
এরপর কী
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, চট্টগ্রাম হামলার ভিডিও বিশ্লেষণ করে নতুন অভিযানে মাঠে নামা হবে, যদিও নির্দিষ্ট কোনও টাইমলাইন দেননি। নৌ পুলিশ বলছে, সোহাগের সম্পদের উৎস ও সহযোগী নেটওয়ার্ক খুঁজতে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন পাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে তদন্তভার বিশেষ দলকে দেওয়া হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার পরিকল্পনা। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলির নিজস্ব ক্লিনআপ ছাড়া অস্ত্রধারী সংস্কৃতি ঠেকানো সম্ভব না।