গ্যাস না থাকায় ৯৬ দিন বন্ধ চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা, ক্ষতি ছুঁয়েছে ৫০০ কোটি
চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ১১ এপ্রিল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় টানা ৯৬ দিন উৎপাদন বন্ধ। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ৪.৫ কোটি টাকা করে মোট ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পেট্রোবাংলার অধীন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (কেজিডিসিএল) বারবার চিঠি দিলেও কাঙ্ক্ষিত গ্যাস মেলেনি। ১৯৮৮ সালে স্থাপিত এই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার বর্তমান দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট, উৎপাদন সক্ষমতা ১,২০০ টন ইউরিয়া। গ্যাস সংকটে বারবার বন্ধ হওয়ায় গত এক যুগে সারস্বনির্ভর কৃষি খাত স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে বেশি দামে আমদানি করা সার কিনতে হচ্ছে।
পটভূমি
আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় ১৯৮৮ সালে উদ্বোধন হওয়া সিইউএফএল ছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ইউরিয়া কারখানা। স্থাপনে ব্যয় হয়েছিল ১,৫৫৬ কোটি টাকা, যার ৭৫% বৈদেশিক ঋণ। শুরুতে দৈনিক ১,৭০০ টন ইউরিয়া ও ১,০০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হতো। গত এক দশকে যন্ত্রপাতি জীর্ণতা ও গ্যাস সরবরাহ ঘাটতিতে উৎপাদন ক্ষমতা ৩০–৩৫% কমেছে।
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা
• গ্যাস বন্ধের সময়কাল: ১১ এপ্রিল–১৫ জুলাই, ৯৬ দিন
• প্রাক্কলিত ক্ষতি: ৪.৫ কোটি × ৯৬ দিন ≈ ৪৩২ কোটি টাকা (কারখানা সূত্র বলছে ৫০০ কোটি)
• বর্তমান গ্যাস চাহিদা: ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট/দিন
• বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা: ১,১০০–১,২০০ টন ইউরিয়া/দিন
• ২০২3 সালে গ্যাস ও যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ ছিল: ২৪৮ দিন
প্রতিক্রিয়া
কারখানার এমডি মিজানুর রহমান ‘রয়টার্স’-কে বলেন, “গ্যাস না দিলে আমরা কিছুই করতে পারি না; অথচ পাশের কেএএফসিও গ্যাস পাচ্ছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী অভিযোগ করেন, কেএএফসিওর প্রতিটন সার সরকারকে ৮০–৯০ হাজার টাকায় কিনতে হয়, অথচ সিইউএফএলের সার ৩৪–৩৭ হাজার টাকায় পড়ে; তবু রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাটিতেই গ্যাস কাটা পড়ে আগে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “মৌসুমি চাহিদা মেটাতে সরকারের এখন আমদানির দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে, এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ বাড়ছে।”
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি এলএনজি আমদানি মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসক্ষেত্রের প্রাকৃতিক উৎপাদন হ্রাস ও বিতরণ অগ্রাধিকারে সারশিল্পকে পিছিয়ে দেওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, আবাসন ও বেসরকারি শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে রেশনিং করলে সার কারখানাগুলো প্রায়ই গ্যাস হারায়। ফলে একদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে উৎপাদন ক্ষতি, অন্যদিকে উচ্চ দামে আমদানি—দ্বিমুখী চাপ তৈরি হচ্ছে।
এর গুরুত্ব কী
সিইউএফএল উৎপাদনে থাকলে দেশে ইউরিয়া সার স্বয়ংসম্পূর্ণতার ১৫–২০% অবদান রাখতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র আমদানি ব্যয়ই বাড়ছে না, সার মজুত কমে কৃষকের পর্যায়ে মূল্য অস্থিরতার ঝুঁকিও বাড়ছে। রমজান ও আসন্ন বোরো মৌসুমে চাহিদা বাড়ার আগে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হলে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়তে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
পেট্রোবাংলা সূত্র ‘নয়া দিগন্ত’কে জানিয়েছে, আগস্টের মধ্যে বঙ্গোপসাগরীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; সাফল্য মিললে সিইউএফএলে جزিয়তভাবে গ্যাস চালু হতে পারে। বিকল্প হিসেবে এলএনজি–ভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি চুক্তির কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। meanwhile, শিল্প মন্ত্রণালয় কারখানার পুরোনো যন্ত্রাংশ আধুনিকায়নের জন্য ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে।