কুমিল্লার দেবিদ্বারে আলাদা দুই পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
মঙ্গলবার ১৫ জুলাই দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি পুকুরে ডুবে মারা গেছে দু-দুটি শিশু। মোহনপুর গ্রামে দুই বছরের আনাস খেলতে গিয়ে, আর নবিয়াবাদে ১১ বছরের ইব্রাহিম বন্ধুর সঙ্গে গোসল করতে নেমে ডুবে যায় বলে দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দু'জনকেই উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ বলছে, পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও অভিযোগ আসেনি।
মূল তথ্য
দেবিদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দিন মো. ইলিয়াস জানান, দুপুরে পৃথক সময়ে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। মোহনপুরের রাকিব হোসেনের একমাত্র ছেলে আনাস বাড়ির লোকজনের অগোচরে বাড়ির লাগোয়া পুকুরে পড়ে যায়। কয়েক কিলোমিটার দূরের নবিয়াবাদে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইব্রাহিম সহপাঠীদের সঙ্গে সাঁতার কাটতে নেমে গভীরে ডুবে যায়। দু'জনকে উদ্ধার করে দ্রুতই চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশু দুটির অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ এলাকায় পুকুর, ডোবা ও খালে গোসল করতে গিয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ বাড়ি-ঘরের পাশেই খোলা জলাধার থাকায় শিশুদের ওপর নজরদারি একটু এড়ালেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক পরিবারই শিশুদের সাঁতার শেখানো বা বাড়ির পুকুর ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করে না, ফলে ঝুঁকি বাড়ে।
সংখ্যায় তথ্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফের ২০১৯ সালের যৌথ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৯ হাজার মানুষ ডুবে মারা যান; এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজারই শিশু। ১–৪ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে ডুবে যাওয়া। শুধু বর্ষা মৌসুমেই সারাদেশে ৪০ শতাংশের বেশি ডুবির ঘটনা ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
জলজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (CIPRB) নির্বাহী পরিচালক ডা. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শিশু ডুবে মারা যাওয়া পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য। ১–৫ বছর বয়সীদের জন্য দিনের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে কমিউনিটি ডে-কেয়ার স্থাপন এবং ৬ বছরের বেশি শিশুদের সাঁতার শেখানোই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।’ ইউনিসেফ বাংলাদেশের পানিস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ফারহানা আক্তার জানান, পুকুর ঘিরে বাঁশের বেড়া, দরজায় তালা, বা বাড়ির লোকের নিয়মিত নজরদারি ছোট্ট কিছু পদক্ষেপ কিন্তু বড় জীবন বাঁচাতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্থানীয় স্কুল ও মসজিদে দ্রুত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। পরিবারগুলোকে বাড়ির পুকুরে অস্থায়ী বেড়া দেওয়া, শিশুদের সাঁতার শেখানো ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানিতে পড়ে গেলে কিভাবে উদ্ধার করতে হয় তার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিও প্রতিটি ইউনিয়নে ডুবে যাওয়া রোধে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের সুপারিশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ‘দুবর্নন’ (ডুবে মৃত্যু নিরসন) আইন প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।