কক্সবাজারে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা ঘিরে বিএনপি-জামায়াত টানাপোড়েন বাড়ছে

কক্সবাজারে ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা ঘিরে বিএনপি-জামায়াত টানাপোড়েন বাড়ছে

১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ফাতেরঘোনা এলাকায় ‘জামায়াত-শিবিরের’ কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন ভারুয়াখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সাকিব উদ্দিন অভি (২৪)। তাঁর সহকর্মী যুবদল নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার মারা যান। তিন দিন ধরে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অভির মাথায় অস্ত্রোপচার ও কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে। ১৬ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ডা. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতালে পৌঁছে আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। বিএনপি নেতৃত্ব হামলার জন্য সরাসরি জামায়াতকে দায়ী করে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে, আর জামায়াত দাবি করেছে ঘটনাটি ‘স্থানীয় বিরোধ’। হামলার জের ধরে দুই দলের কয়েক দশকের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

ঘটনাপ্রবাহ

ধর্ষিত ১৩ জুলাই রাত: পানিরছড়া বটতলী বাজার থেকে ফেরার পথে ছাত্রদল নেতা সাকিব উদ্দিন অভি ও যুবদল নেতা রহিম উদ্দিন সিকদারকে ঘিরে ফেলে দেশি অস্ত্রধারী একটি দল। স্থানীয় বিএনপি অভিযোগ করছে, আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াতের ইউনিট সভাপতি আব্দুল আল নোমান। ১৪ জুলাই ভোরে রহিম চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান; অভি আহত অবস্থায় ভর্তি হন। ১৬ জুলাই দুপুরে তারেক রহমান ঢাকায় বসে ভিডিও কনফারেন্সে অভির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ও চিকিৎসার সব খরচ বহনের ঘোষণা দেন (সূত্র: DhakaTimes24)।

প্রেক্ষাপট

বিএনপি ও জামায়াত ১৯৯০ দশক থেকে বহুবার জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ নিলেও ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। সাম্প্রতিক অনুরূপ সহিংস ঘটনায় দুই দলই মুখোমুখি অবস্থানে। কক্সবাজারের হামলার আগে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা–কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে জামায়াত ১৭ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ ডেকেছে, অথচ বিএনপি সেখানে সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ একই স্লোগান নিয়েও মাঠের অভ্যন্তরে পরস্পরের ওপর অবিশ্বাস তীব্র হচ্ছে।

প্রতিক্রিয়া

হাসপাতালে খোঁজ নিতে গিয়ে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিক সাংবাদিকদের বলেন, “মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও কিডনি জটিলতায় অভির জীবন ঝুঁকিতে। হামলাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার না করা বিচারহীনতার উদাহরণ।” ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির অভিযোগ করেন, “জামায়াত শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস আর বিভাজনের রাজনীতি করছে।” অন্যদিকে জেলা জামায়াতের আমির নুর আহমদ আনোয়ারি প্রথম আলোকে বলেছেন, “মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ থেকে সংঘর্ষ হয়েছে, এর সঙ্গে জামায়াতের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের সম্পর্ক নেই।”

বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মনে করেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও বিরোধী শিবিরের ঐক্য জোড়ালো হয়নি। কক্সবাজারের হামলা দেখাল, মাঠের নিচে বহু পুরোনো সন্দেহ এখন প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিচ্ছে।” অনেকে বলছেন, জামায়াত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ প্ল্যাটফর্মে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে, আর বিএনপি তা রুখতে কড়া সুর নিচ্ছে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী ভোট ভাঙার ঝুঁকি বাড়ছে।

এর গুরুত্ব কী

১) ছাত্রদল নেতার জীবন সংকটে—তরুণ রাজনীতিকদের নিরাপত্তা আবারও প্রশ্নের মুখে। ২) বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক ছিন্ন হলে বিরোধী শিবিরে নতুন মেরুকরণ ঘটতে পারে। ৩) জামায়াত-বিরোধী স্লোগান ইতিমধ্যেই বিএনপির মাঠের কর্মসূচির প্রধান সুর—যা দুই দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে ঠেলে দিচ্ছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যার ও ১৪৩ ধারাসহ একাধিক ধারায় মামলা হলেও মূল আসামিরা এখনও পলাতক। বিএনপি বলছে, গ্রেপ্তার না হলে তারা জেলা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আক্রমণকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। meanwhile, জামায়াত আগামীকালকের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশ্বাস দিলেও নিরাপত্তা সংস্থাগুলি জেলাজুড়ে অতিরিক্ত র‍্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে।

More From Author

গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, কারফিউ ও দেশজুড়ে প্রতিবাদ

হিমালয়ের পর্যটন হটস্পটে ডিম ৬০০ রুপি, ঘরে ভাড়া মাত্র ১ হাজার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *